• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

গবেষণার ফল প্রকাশ বর্তমানে আক্রান্তদের ২০ শতাংশেরই ওমিক্রন

প্রকাশ:  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৩৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট


বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের ২০ শতাংশ বর্তমানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত। তবে চলতি মাসে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কেভিড-১৯ এর জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য কেভিড-১৯ এর জেনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন, বৈশি^ক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনোমের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জেনোম ডাটাবেজ তৈরি করা। এ প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ-এর চলমান গবেষণার ৬ (ছয়) মাস ১৫ (পনের) দিনের ফলাফল, আমরা আশা করি পরবর্তী সপ্তাহগুলােতে হালনাগাদ করা ফলাফল জানাতে পারব।
২৯ জুন ২০২১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশের রোগীদের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মোট ৭৬৯ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনো বয়সসীমাকেই কোভিড ১৯-এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ রয়েছে।
গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে যেমন- ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ষাটোর্ধ্ব বয়সের রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
কোভিড-১৯-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় জুলাই ২০২১-এ দেখা যায়, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হচ্ছে সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ, ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্স এ প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯.৩১ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন-আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল এ শনাক্ত হয় ২০ই ভ্যারিয়েন্ট, একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। ৮ ডিসেম্বর ২০১১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। প্রকৃত ফলাফল আমরা এ মাসেই আপনাদের অবগত করব।
ওমিক্রন ভাইরাস ডায়াগনোসিসের জন্য আরটিপিসিআর -এর মাধ্যমে ৩টি জিন- ঝ, ঘ২, ঊ দেখা হয় (ইইঈ রিসার্স)। এর মধ্যে ঝ জিনটি ডিটেকটেড না হলে ওমিক্রনের সম্ভাবনা বেশি, কিন্তু ডওঔঙ এঁরফষরহবং অনুসারে জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কনফার্ম করতে হবে।
ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়াচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের জেনেটিক কোড এ ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রোটিনের বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কোনো কোনো ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল।
তৃতীয়বারের মত সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী থেকে সংগৃহীত স্যাম্পলে আমরা জিনোম সিকোয়েন্স করে কেবল ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। যেহেতু ওমিক্রন সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন কম।
পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্তহীন (ঁহফবঃবপঃবফ) অবস্থায় আছে বলে মনে করছি।
প্রত্যেক করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনে আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা গ্রহণ করতে হবে।
করোনা জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের গবেষণায় সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। প্রধান গবেষক ছিলেন ডাঃ লায়লা আনজুমান বানু, অধ্যাপক, জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়ােলজি ও চেয়ারম্যান, এনাটমি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।
এছাড়া গবেষণা টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- ডাঃ জিন্নাত আরা ইয়াসমীন, সহযােগী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডাঃ বিষ্ণু পদ দে, সহকারী অধ্যাপক, প্যাথলজি বিভাগ, ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন মাসুম, সহকারী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডাঃ ইলােরা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগ, ডাঃ আবিদা সুলতানা, রেসিডেন্ট, ফেইজ- বি, এনাটমি বিভাগ, নাহিদ আজমীন, এমফিল, থিসিস, এনাটমি বিভাগ, অধ্যাপক ডাঃ আফজালুন নেছা, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ভাইরোলজি বিভাগ, সােয়েব হােসেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, জেনোম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, শ্যামল চন্দ্র বিশ্বাস, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, জেনোম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, অমল গনপতি, ফ্ল্যাবোটমিষ্ট, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টার, বিএসএমএমইউ। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।