• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নির্বাচনে গেল নারীর ইজ্জত : এই লজ্জা কার

প্রকাশ:  ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নোয়াখালী সুবর্ণচরের নারীর অপরাধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষকে সমর্থন জানিয়েছে। সেজন্যে তাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করা হলো। আওয়ামী লীগ এতো বড় একটি দল, এ রকম দু-একজন সমর্থনকারী না থাকলে নিশ্চয়ই দলের কিছু যায় আসে না। কিন্তু দলের লেবাস লাগিয়ে একজন নারীকে যেভাবে ক’জন আওয়ামী লীগ কর্মী লাঞ্ছিত করে গণধর্ষণ করলো, এতে করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মান কতটা বাড়লো? এই হীনমন্যতা যাদের ভেতরে রয়েছে তারা দল না করলেই পারে। কারণ এরকম কর্মীদের আর যাই হোক কোন্ দলের সম্মান ধরে রাখার মত যোগ্যতা নেই। সুবর্ণচরে গণধর্ষণ তার নমুনা। মনুষ্যত্ব থাকলে একজন মানুষ অন্য আরেকজন মানুষের চরম শ্লীলতাহানি করতে একটু হলেও বুক কাঁপত। এরা দেশের শত্রু। তাদের শাস্তি শ্রীঘর নয়, সরাসরি মৃত্যুদ- হওয়া উচিত। তবেই পরবর্তী কোনো ধর্ষক এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না। কিন্তু আফসোস, কোনো কোনো সময় এ রকম জঘন্য অপরাধ করে কেউ কেউ আকস্মিকভাবে পার পেয়ে যায়। দলের আশীর্বাদ তুষ্ট কিছু লোকের কারণে এমন হয়। এর ফলে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। সমাজে বাড়তে থাকে অপরাধ প্রবণতা। এর জন্যে দায়ী কিছু পাতি নেতা, যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় তাদের মত কর্মীদের। তাদের ছত্রছায়ায় এই কুৎসিত মানুষগুলো তথা সমাজের কীটরা নারীদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়ে বুক উঁচু করে সমাজে বাস করে। এজন্যে কিছু অসাধু রাজনীতিবিদ এর দায় কখনো এড়াতে পারেনা। কারণ তারাই অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। ভাবা উচিত, কোনো অপরাধীই দলের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।     পৃথিবীর যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে রয়েছে পক্ষ-বিপক্ষ, কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি একটাই। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়। অনেক ক্ষেত্রে সহনশীল হয়ে যায় একমাত্র জনগণের জন্যে। তবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কেনো এতো কঠোর মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করে। প্রশ্ন জাগে, আসলে তাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কী। তারা কোন্ জনগণের জন্যে রাজনীতি করে। যে খোদ জনগণের পছন্দ অপছন্দের উপর কঠোর হস্তক্ষেপ করতে চায়-এটা কেমন গণতন্ত্র। পৃথিবীর কোন্ দেশে এ রকম রাজনৈতিক বৈষম্য আছে যে, মতনৈক্য প্রদর্শনকারী নাগরিকদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন করতে হবে? আমরা সবাই একই রাষ্ট্রের নাগরিক। একই সার্বভৌমত্বের উপর বসবাস। এরপরও কেন এমন বৈষম্যমূলক আচরণ। একজন অসহায় নারীর উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর মধ্যে কী বাহাদুরি রয়েছে তা বোধগম্য নয়। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের ঘটনা জাতির জন্যে খুবই লজ্জার। এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করা এখনই প্রয়োজন। তাই যে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরও সহনশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় রাষ্ট্রের পক্ষ-বিপক্ষ নাগরিকদের উপর। তা না হলে অপরাধ বাড়তে থাকবে। একটা সময় প্রশাসনের কষ্ট হয়ে যাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে। গণতন্ত্রের সম্মানার্থে একজন নাগরিক যে দলেরই হোক না কেনো, অহেতুক প্রতিহিংসার আঘাত না করাই শ্রেয়। তাদের প্রতিহিংসা ও লালসার শিকার গৃহবধূ সমাজে যতদিন বেঁচে থাকবে গণধর্ষণের তিলক কপলে এঁটে বাঁচতে হবে। ইতোমধ্যে এই ঘটনার নেতৃত্বদানকারী ও প্রধান আসামী ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও বেছুসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারে সীমাবদ্ধ না থেকে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে ওঁৎপাতা অন্য নরপিশাচদের জন্যে এটি হবে বড় দৃষ্টান্ত। যেন এই সমাজ আর কলুষিত না হয় এবং কোন রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় তাদের নোংরা জঘন্য কর্মকা-ে। নির্যতাতিতা ও তার আহত পরিবারকে দেখতে গেলেন ও খোঁজখবর নিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ইয়াদিয়া জামান, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, জাতীয় মহিলা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) লুভনা মরিয়ম, জেলা মহিলা সংস্থার কর্মকর্তা মোঃ রাব্বি চৌধুরী। এভাবেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে মানবাধিকার কর্মীদের, যেন অপরাধীরা ছাড় না পেতে পারে।      সম্প্রতি দৈনিক আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে কটুক্তির অভিযোগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। নারী সাংবাদিককে শুধু কটূক্তি করেছিল এতেই চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। এরপর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিচার শুরু হয়। আর এই গৃহবধূকে কটুক্তি নয়, নরপশুরা পালাক্রমে গণধর্ষণ করেছে। তাদের কেমন বিচার হওয়া উচিত। গৃহবধূর সন্তানরা বড় হয়ে কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবে। সময়ের পরিবর্তনে যখন জানবে তাদের মা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল তখন এই লজ্জা কার হবে। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত দেশ ইতালির জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের নির্বাচনে সহিংসতা দূরের কথা, একটু টুশব্দ শোনা যায় না। নীরবে নিভৃতে যে যার ভোট প্রয়োগ করে। কোনো প্রকার হৈহুল্লোড় নেই। ধর্ষণ হওয়াতো দুঃস্বপ্ন।      তাদের ইশতেহারেও দেশের উন্নয়ন থাকে। তবে প্রতিহিংসার কাদা ছোড়াছুড়ি নেই বললেই চলে।      আমার দেশের রাজনীতি নিয়ে তারা হাসে। ২৯ ডিসেম্বর স্থানীয় বহুল আলোচিত পত্রিকা লা রিপুবলিকায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদনে লিখেছে যে, সহিংসতার মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাতে কি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়নি? তাদের মতে, বাংলাদেশ একটি বিশৃঙ্খল দেশ। এটা আমরা কখনও আশা করি না আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছে। সবাই মিলেমিশে দেশ পরিচালনা করলে দেশের উন্নয়ন কখনও ব্যাহত হতে পারে না। আমরা বিশ^ মানচিত্রে সভ্যতার রাজনীতি তুলে ধরতে একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। দেশের উন্নয়নের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করতে চাইলে দেশের কোনো জনগণের আপত্তি থাকতে পারে না।  লেখক : সাধারণ সম্পাদক, অল ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।

সর্বাধিক পঠিত