• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

লিভ টুগেদার

হাসান আলী

প্রকাশ:  ৩১ মে ২০২০, ১৩:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নিউমার্কেটের এক নাম্বার গেটে মামুনকে দেখে চমকে উঠলো সুলতানা। মাথা ভর্তি চুল, মুখে দাড়ি আর মোটা ফ্রেমের চশমা পরা মামুনকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি। ভিড় এড়িয়ে দ্রুত কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছ মামুন? মামুন অপলক তাকিয়ে রইলো। বৈশাখী বিকেলের রোদ সুলতানার মুখে পড়ছে। ব্যাগ হাতে মামুন কাঁপছে। সুলতানা মামুনের হাত ধরে ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে দিল। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছে দিল। ফাস্টফুডের দোকান কর্মচারী এসে জিজ্ঞেস করলো, আন্টি আপনাদের কী দিব? সুলতানা বললো দু গ্লাস বেলের শরবত আর এক বোতল পানি দাও। মামুনের দিকে তাকিয়ে সুলতানা বললো, তুমি এতটা রোগা হলে কী করে? কতদিন পর দেখা হলো? বেলের শরবতটুকু শেষ করে মামুন বললো, চুয়ালি্লশ বছর পর। বিয়ের আগের দিন আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চোখের পানি ফেলে বিদায় নিয়েছিলে। সুলতানা বললো, এতোকাল কোথায় কাটালে? মামুন বললো, কুড়িগ্রাম পিটিআই থেকে বছর সাতেক আগে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করলাম। বছর খানেক ধরে বড় ছেলের বাসায় থাকি। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিউমার্কেট বন্ধ না থাকলে প্রায় প্রতিদিনই যেখান থেকে তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে সেখানেই ঘণ্টা খানেক কাটাই। গত এক বছরে কি একবারও নিউমার্কেট আসোনি? আমি অনেক কাল আমেরিকা ছিলাম। মাস তিনেক আগে ফিরেছি। ধানমন্ডির আব্বার বাড়িটা ডেভেলপারকে দেয়া হয়েছিল। আমি দুটো ফ্ল্যাট পেয়েছি। একটাতে আমি একাই থাকি। তারপর কথার ঝড় উঠলো। দুজনেই ফিরে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলে আসা দিনগুলোতে। নিউমার্কেটের এক নাম্বার গেট হয়ে উঠলো নিত্য আড্ডার স্থান। প্রবীণ নরনারীর এই জোড়কে অনেকেই ঈর্ষা করতো। মাত্র এক মাসের মধ্যেই করোনার খবর হয়ে গেলো। অবশেষে লকডাউনের ঘোষণা। মামুন-সুলতানার ঘরবন্দী জীবন শুরু হলো।

সুলতানা পাশের ফ্ল্যাটটি ননদের মেয়েকে কিছু কম ভাড়ায় দিয়েছেন। স্থায়ী গৃহকর্মী ছেলের অসুখের সংবাদে বাড়ি চলে গেছে। খ-কালীন গৃহকর্মীকে ফ্ল্যাট মালিক সমিতি বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। একদিন সকাল থেকে সুলতানার হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর শুরু হলো। করোনা আতংকে আত্মীয়স্বজনকে কাছে পাওয়া গেল না। বিকেলে মামুনকে ফোনে অসুস্থতার সংবাদ জানালো। সুলতানার শত বাধা উপেক্ষা করে বাসায় হাজির । গরম পানি, লেবুর শরবত, চা, ফলমূল খেতে দিল। মামুন ছেলের ফোন পেয়ে জানিয়ে দিল, বন্ধু অসুস্থ, তাই আজ বাসায় ফিরবে না।

চারদিন পর সুলতানা সুস্থ হয়ে উঠলো। এবার মামুন অসুস্থ হয়ে পড়লো। কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হলো।

সুলতানার মেয়ে আমেরিকা থেকে ফোনে জানতে চাইলো, তুমি কেন দিনের পর দিন মামুন সাহেবকে বাসায় রেখেছো? তোমার কি কোনো লাজ-লজ্জা নেই? আত্মীয় স্বজন ছি ছি করছে। একদিন তুমি ভালোবাসার জন্য সাহসী হতে পারোনি। আজ বুড়ো বয়সে মানুষ হাসানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেছো! তোমার কি একটুও বুক কাঁপলো না?

মামুন ফোন পেলো বিসিএস ক্যাডার মেয়ের, আব্বু তুমি এটা কী করলে? তিরিশ বছর আগে আম্মু মারা যাবার পর সবাই যখন তোমাকে বিয়ে করতে বলেছিল তখন তুমি বিয়ে করোনি। আমাদের বডুকে আগলে রেখে মানুষ করেছো। আজ তোমার ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত। তোমার নাতনি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের কথা একটুও ভাবলে না!

অনেক বাজার নিয়ে কেয়ারটেকার আর দারোয়ান হাজির সুলতানার দরজায়। তাদের দেখে সুলতানা বললো, আমরা দুজন স্বেচ্ছায় সুস্থ মস্তিষ্কে বিয়ে করেছি। তোমরা দুজন সাক্ষী থাকলে। ধরো, খেজুর নিয়ে যাও।

রাতে সুলতানার মেয়ে আমেরিকা থেকে ফোনে বললো, কেয়ারটেকার জানালো, তুমি বিয়ে করেছো!

সুলতানা বললো, হ্যাঁ,পাঁচ হাজার টাকা দেনমোহরে দারোয়ান-কেয়ারটেকার কে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি।

মেয়ে চিৎকার করে বললো, তুমি এত সস্তা!

সুলতানা শান্ত কণ্ঠে জানালো, দেনমোহর বেশি হলে অনেক লোকের সমাগম হলে দামি খাবার হলেই তবে বিয়ে দামি হবে?