• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী তাহমিনা হারুন

পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩৮
চাঁদপুর পোস্ট রিপোর্ট
প্রিন্ট

আর কক্ষণো কোনোদিন শোনা যাবে না সেই প্রিয় কণ্ঠ, যে কণ্ঠের মাধুর্যে মুগ্ধ হতো চাঁদপুরের মানুষ। সকলের প্রিয় সংগীত শিল্পী তাহমিনা হারুন আকস্মিকভাবে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মহাসচিব ও চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের রূপকার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক হারুন আল রশীদের সহধর্মিণী তাহমিনা হারুন ১৯ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ১০ মিনিটের সময় চাঁদপুর পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ডের মধ্য ইচলীস্থ নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি.....রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৫ বছর। তিনি ডায়াবেটিসজনিত মারাত্মক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি স্বামী, দু ছেলে ও ছেলেদের স্ত্রী-সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী রেখে যান। তার অকাল মৃত্যুর সংবাদে চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর কয়েক মিনিটের মধ্যে চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠক, শিল্পী, কলা-কুশলীসহ আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে আসেন তাহমিনা হারুনের নিজের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা নান্দনিক বাসভবনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর সংবাদটি তাৎক্ষণিক ভাইরালে রূপ নেয়। যে কারণে দেশ-বিদেশ থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ জেনে অংসংখ্য মানুষ ফেসবুকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
এদিকে কাকডাকা ভোরেই কণ্ঠশিল্পী তাহমিনা হারুনের মৃত্যুতে সহমর্মিতা ও সমবেদনা প্রকাশ করতে দূর-দূরান্ত থেকে শুভাকাক্সক্ষীরা ছুটে আসেন তার বাসভবনে। সংস্কৃতি অঙ্গনের দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধারা কোনোভাবেই কণ্ঠশিল্পী তাহমিনা হারুনের পরপারে চলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। প্রায় সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরিচিত সকলে মুহ্যমান হয়ে পড়েন গভীর শোকে।
হারুন আল রশীদ তার দীর্ঘ ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী তাহমিনা হারুনের মৃত্যুতে ভীষণ শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পূর্বেও এক সাথে বসে রাতের খাবার খেয়ে খোশগল্পে মেতেছিলেন উভয়ই। কিন্তু মধ্যরাতে হঠাৎ করে তাহমিনা হারুনের ডায়াবেটিসের মাত্রা (সুগার) কমে যাওয়ায় তার স্বামী হারুন আল রশীদ তাৎক্ষণিক ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষার পর চিনির শরবতসহ চিনি খাইয়ে দেন। কিন্তু এরপরেও তার সুগারের মাত্রা আরো কমে যায়। এক পর্যায়ে হারুন আল রশীদ ফোন করে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনালেন। কিন্তু তাহমিনা হারুন হাসপাতালে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করে স্বামী ও বড় ছেলেকে তার কাছেই থাকার জন্যে বলেন। এরপর কিছুটা ছটফট শুরু হলে তাহমিনা হারুন তার স্বামী হারুন আল রশীদের বুকে মাথা রেখে তাকে দোয়া-দরূদ পড়তে বলেন। এভাবে প্রায় ২ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে পরপারে চলে গেলেন তাহমিনা হারুন।
মিসেস তাহমিনা হারুন দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। বেশ ক’বার ঢাকায় প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি দু’বার চোখের অপারেশনও করতে হয়েছে তাকে।
গতকাল বাদ যোহর চাঁদপুর পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ডের ঢালীঘাট এলাকায় মধ্য ইচলী নূরানী জামে মসজিদে তাহমিনা হারুনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সংস্কৃতি অঙ্গনের অগণিত সংগঠক, শিল্পী এবং স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ এলাকার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমা তাহমিনা হারুনের বড় ভাই রামপুর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিন।
জানাজার পূর্বে মরহুমা তাহমিনা হারুনের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণমূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন তার স্বামী হারুন আল রশীদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষে সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত ও স্থানীয় মুরুব্বিদের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা রফিক ভূঁইয়া। দাফনের পূর্বে মরহুমার কফিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চাঁদপুর জেলা শাখা, চাঁদপুর থিয়েটার ফোরাম, চাঁদপুর সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জীবনদীপ। তাকে নিজ বাসভবনের সামনে অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে মরহুমার রূহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন নূরানী জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওঃ মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
উল্লেখ্য, কণ্ঠশিল্পী তাহমিনা হারুন চাঁদপুরের অগণিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে গেছেন। গত দু বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেননি এবং সঙ্গীত পরিবেশন থেকে বিরত থাকেন। তাহমিনা হারুন শিশুকালেই সংস্কৃতি অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে চাঁদপুরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সঙ্গীত নিকেতনে সঙ্গীতের উপর তালিম গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদপুর অঙ্কুর কচি-কাঁচার মেলার সদস্য হিসেবে বেশ ক’বছর শিশু শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন বনানী খেলাঘর, চাঁদপুরের সাথে সম্পৃক্ত হন। সাংস্কৃতিক সংগঠক হারুন আল রশিদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তার পরিচালিত সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গের সাথে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত জড়িত ছিলেন। চাঁদপুরের সুধীজন কণ্ঠশিল্পী তাহমিনার পরিবেশিত গানগুলো অনেকটা জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গীত শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের ন্যায় পরিবেশনের কারণে তাকে এ দু জাতীয় শিল্পীর সাথে তুলনা করতেন। তাহমিনা হারুন তার সুরেলা কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্যে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক সম্মাননা মেডেল অর্জন করেন। এছাড়া বেশ ক’বার দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের পুরস্কার অর্জন করেন। উল্লেখ্য, এ প্রখ্যাত শিল্পী মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত সদস্য সংগঠন অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর আজীবন সদস্য ছিলেন।
 

 

 

সর্বাধিক পঠিত