• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জেলখাটে-ঝুঁকি নেয় কর্মীরা, মনোনয়ন পায় হাইব্রিড-কাউয়ারা

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৪৯ | আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৫০
পীর হাবিবুর রহমান
প্রিন্ট

জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকসীগঞ্জ) আসনে ২০০৮ সালে নৌকার গণজোয়ারের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ। অনেক সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে নূর মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠতা। একজন তৃণমূল আওয়ামী লীগের কর্মীর চরিত্র যেমন রয়েছে তার তেমনি নিরাবরণ, সহজ, সরল মন ও জীবন সবাইকে আকৃষ্ট করে। তার সরলতার জন্য সবাই তাকে ভালোবাসেন। আড্ডায় বসলে নূর মোহাম্মদের নানামূখী বিষয় নিয়ে দিল খোলা কথাবার্তা আসর জমিয়ে দেয়।
 
ক’দিন আগে ঢাকা ক্লাবের এক আড্ডায় আলোচনা হচ্ছিল, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘিরে দলের বিদ্রোহ কিভাবে প্রতিরোধ করবে? কিভাবে তৃণমূলে মনোনয়ন লড়াইয়ে যুক্ত আওয়ামী লীগকে একক প্রার্থীর পিছনে প্রতিটি আসনে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করবে? সাদামাটা নূর মোহাম্মদের সহজ সরল স্বীকারোক্তি রসিকতার ছলে করলেও কথাটি আমার কানে বাজছে। নূর মোহাম্মদ হাসতে হাসতে বলছিলেন, একেকটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের অনেক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। জনপ্রিয়তায়ও তারা কোনো অংশে কম নন। কিন্তু সেসব আসনে প্রতিটি নির্বাচনে একজনকেই মনোনয়ন দেয়া হয় আর নেতাকর্মীরা পরিশ্রম করে নৌকার জোরে তাকে জিতিয়ে দেন। এতে একজনই বারবার এমপি হন। বাকিদের আর মনোনয়ন লাভের সুযোগ হয় না।
 
একদিন বয়স বা অন্যকোন কারণে সেই এমপির মৃত্যু হলে দেখা যায় তার স্ত্রী বা সন্তান মনোনয়ন পান। এতে যারা দিনের পর দিন দল করেন, কষ্ট করেন, সংগঠনকে সময় দেন, মানুষের সুখে, দুঃখে পাশে থাকেন; মনোনয়ন যুদ্ধে তাদেরকেই বঞ্চিত হতে হয়। এমপি হলেই নেতারা নিজের, পরিবারের বা আত্নীয় স্বজনদের এমনকি বিশস্তকর্মীদের ভাগ্য বদলে দিয়ে আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো রাতারাতি বিত্তবৈভব ও সম্পদের মালিক হন। অনেকের এমপি হওয়ার আগে যে অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল, এমপি হবার পর দেখা যায় সেটি কাটিয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির উপর তারা দাঁড়িয়ে গেছেন।
 
নানা মহলের এই সমালোচনা আড্ডার টেবিলে ঠাঁই পেলে নূর মোহাম্মদ আবারো রসিকতার ছলে বললেন, ‘ধরেন, আপনারা যে কথা বলছেন, সেটিও যদি সত্যি হয় তাহলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দানের সময় প্রতিটি আসনে বিকল্প, শক্তিশালী নতুন প্রার্থীর সন্ধান করে তাকেই নৌকা দেয়া উচিত। কারণ নিজের ভাগ্যবদলই যদি হয় রাজনীতি, তাহলে দল একজনকে কেন বারবার ভাগ্যবদলের সুযোগ দেবে? সকলেরই দলে শ্রম আছে। সকলেরেই দলের কাছে মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার আছে। একজন বারবার এমপি হয়ে নিজের ভাগ্য অনেক বদলেছেন, এবার নতুন কাউকে সেই ভাগ্য বদলের সুযোগ দেয়া উচিত-এমন যুক্তিতে হলেও বিকল্প জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। আর যদি মনে করেন, বারবার দলের এমপি হতে গিয়ে মানুষের কল্যাণে আত্নত্যাগ করতে করতে এমপিরা রিক্ত, নিঃস্ব হয়ে গেছেন তাহলেও তাদের আর নিঃস্ব হতে না দেয়ার জন্য হলেও মনোনয়নে পরিবর্তন আনা জরুরি। এতে একজনকে নিঃস্ব হতে হলো না। আত্নত্যাগে সবাই সুযোগ পেল।
 
দলের প্রতি আনুগত্য রেখে পথ চলা নূর মোহাম্মদরা সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেন। আমি শুধু একটি নির্বাচনী এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীর কথাই বললাম। সারাদেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ, গ্রহণযোগ্য দলীয় প্রার্থী রয়েছেন; যারা বারবার নির্বাচন এলে দলীয় নেতৃত্বের আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। অনেক নির্বাচনী এলাকায় সৎ, আদর্শবান নেতাকর্মী আছেন যারা দলের নেত্রী ও আদর্শের প্রতি অনুগত। কোনো সিন্ডিকেটে তাদের সম্পর্ক নেই।
 
বেশ কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার স্বভাবসুলভ রসিকতায় বলেছিলেন, এখন রাজনীতি করতে হলে ‘এম এম বি’ থাকতে হবে। অর্থাৎ মানি, মাসল এবং ব্লেসিং থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের কঠিন অগ্নিপরীক্ষার সময় ছিল ৭৫ উত্তর। সেই সময় থেকে প্রতিটি দুঃসময়ে নিরন্তর দল ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে খেয়ে না খেয়ে পথ হাঁটা অসংখ্য নেতাকর্মী পোড়খাওয়া রাজনৈতিক সংগ্রামের ভিতর দিয়ে নিজেদের তৈরি করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো ৯০ উত্তর গণতন্ত্রের সূচনায় ১৯৯১ ও ৯৬ সালের নির্বাচনে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখার ছাত্রদলের অসংখ্য নেতা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ৭৫ এর পর ও ৯০ এ ভূমিকা রাখা ছাত্রলীগের নেতারা স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে অসংখ্য পরিচিত মুখ এখনো দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে পারেননি।
 
রাজনীতিতে টাকা, পেশীশক্তি ও চাটুকারিতার যে আষ্ফালন দেখা দিয়েছে সেখানে আদর্শিক রাজনীতির পথ হাঁটা নেতাকর্মীরা পিছনে পরেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরেকটি বিষয় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ইমেজের ওপর ভর করে ৫০ বছর আগে কে এমপি হয়েছিলেন, হঠাৎ করে এত বছর ধরে তৈরি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তাদের সন্তানদের ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা। আরেকটি হলো কোনো এমপি, মন্ত্রী, নেতা মারা গেলেন বছরের পর বছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দলের নেতাকর্মীদের বুক দিয়ে আগলে রাখা সংগঠকরা মনোনয়ন পান না। আবেগের তড়িতে তুলে আনা হয় তাদের স্ত্রী, পুত্র বা কন্যাদের। এখানে যোগ্যতার চেয়ে পরিবারতন্ত্র বড় হয়ে দেখা দেয়।
 
ঝুঁকি নেয়, শ্রম দেয়, জেল খাটে কর্মীরা আর মনোনয়ন নেয় উড়ে আসা বিত্তশালী, পেশীশক্তি বা করুণাস্রিতরা। এতে করে দলীয় নেতাদের ভাষা হাইব্রিড, কাউয়ারাই উঠে আসে। নিদারুণ অবহেলায় পরে থাকে কর্মীরা। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ অনেক নেতা তৈরি করেছে। নিরন্তর সংগ্রাম ও সংগঠকের ভূমিকায় তারা পথ চলছেন। তাদের কতজন মনোনয়ন পেয়েছেন এ পর্যন্ত?
 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ। ইঙ্গিত করেছেন, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য। জনমত জরিপে যারা এগিয়ে থাকবেন, তারাই মনোনয়ন পাবেন। বিগত ইউপি নির্বাচন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন সর্বশেষ দলকে তৃণমূল পর্যায়ে বিভক্ত করেছে। ইউপি নির্বাচনে জেলায় জেলায় মনোনয়ন বাণিজ্য দলের ভিতরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ৪-৫ জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী এখন মুখোমুখি। অনেক আসনে প্রতিদ্বন্ধিতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতাকর্মীরাও পরে আছেন।
 
নূর মোহাম্মদের মতো অসংখ্য নেতাকর্মী প্রতি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের বিবেচনা করবেন নাকি মনোনয়ন না দিলেও সন্তুষ্ট করে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোটযুদ্ধে কাজে লাগাবেন, সেটি নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। বঙ্গবন্ধু কন্যা পারেন সারা দেশের নূর মোহাম্মদদের ডেকে কথা বলতে। সেই সঙ্গে জনমত জরিপ নিয়ে সংসদকে তার মর্যাদার আসনে নিয়ে আসার জন্য শিক্ষিত, মেধাবি আইনপ্রণেতা তুলে আনতে দল ও ক্ষমতা নির্ভর সিন্ডিকেটের বাইরে পরে থাকা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিবেচনা করতে।
 
মিয়ানমার সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে জীবন নিয়ে পালিয়ে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীর বোঝা বহন করছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমার শাসকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে; আজীবন গণতন্ত্রের সংগ্রামী, নির্যাতিত, নীপিড়িত নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল পাওয়া অন সান সুচির সকল অর্জন রোহিঙ্গাদের রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। ঠিক তখন গোটা বাংলাদেশ মানবতার হৃদয় নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো দিনরাত পরিশ্রম করছে তাদের সেবায়।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয়ই দেননি, শরনার্থী শিবির ঘুরে তাদের মমতাই জড়াননি; বিশ্ব দরবারে জনমত গড়ে তুলতে, মিয়ানমার শাসকদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। জাতিসংঘে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। গল ব্লডার অপারেশনের জন্য এখনো তিনি দেশের বাইরে। কিন্তু ফাইলওয়ার্ক, দেশের পরিস্থিতি তার নখদর্পনে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা মহা আনন্দযজ্ঞে উৎসবের বন্যায় বর্ণাঢ্যরূপে সম্পন্ন হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সফল হয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশের জন্ম ও তার সংগ্রামে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ লড়াই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে। একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আদর্শ। এখানে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষেরা স্বাধীনভাবে তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করবেন-এটাই সাংবিধানিক অধিকার। আর আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সম্প্রীতির আত্নার বন্ধন নিয়ে পথ চলা।
 
সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য কখনো সখনো সমাজের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা মতলববাজদের কারণে হোঁচট খেয়েছে। সেটি সকলের জন্য লজ্জা ও বেদনায়। আমরা সেই লজ্জা ও বেদনার পথে হাঁটতে নারাজ। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, ধর্মান্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে দেখা বা বিচার করা নয়, জাতিগত অবস্থান থেকে আমরা সবাই এক রাষ্ট্রের নাগরিক। আমরা মানুষ, আমরা মানবতার পক্ষে মানবিক শক্তি। দানব শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ার কৃতিত্ব জাতি হিসাবে আমাদেরকেই বড় করেছে। সকল ধর্মের নাগরিকরাই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ধর্মীয় রীতিনীতি স্বাধীনভাবে পালন করবেন। ধর্মীয়ভাবে তাদের বিচারের জায়গা নিজস্ব সৃষ্টিকর্তার ওপর। এক ধর্মের মানুষের ওপর আরেক ধর্মের মানুষের বল প্রয়োগ সংবিধান, আইন, ধর্ম কোনটাই অনুমতি দেয় না।
 
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ, রোহিঙ্গা শরনার্থী ইস্যুতে চাপা পরে গেছে। মাঝখানে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মতবিরোধ যে ঝড় বইছিল, সেটিও তলানিতে পরে ছিল। হঠাৎ করে সোমবার প্রধান বিচারপতির অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটির আবেদন এবং তার বাসভবনে সন্ধ্যা নামতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আইনজীবীরা দেখা করতে গেলে তিনি সাক্ষাত দেননি। গেট থেকেই তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এক্ষেত্রে বিবেচকের পরিচয় দিয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির গতিপথ কি হবে তা এখনো দৃশ্যমান নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকেই লন্ডনে সন্তানের সঙ্গে রয়েছেন। কবে ফিরবেন, কেউ জানেন না। বিএনপির রাজনীতি চলছে বিবৃতি, বক্তৃতায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলছে ত্রাণের কাফেলায়। বিকল্প জোট গড়তে ছোট দলের বড় নেতারা ড্রয়িংরুম বৈঠক ও নৈশভোজেই বন্দী। এক ধরণের ভ্যাপসা গরম বাইরে, শরতের কাশবন ফুটেছে দিকে দিকে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কি এক গুঁমোট হাওয়া টের পাচ্ছেন। ভোটের রাজনীতির দুয়ার, সংসদীয় গণতন্ত্রের দরজাকে প্রশস্ত করলেই এটি কেটে যাবে। সেই দরজা প্রশস্ত করতে হলেও রাজনৈতিক সমঝোতা অনিবার্য। কিন্তু সেটি আদৌ ঘটবে কিনা, তার আলামত দেখা যাচ্ছে না। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির ভবিষ্যত কি হবে, এখনো তা অন্ধকারে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ জীবনের শেষ নির্বাচনী লড়াইয়ে স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
 
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিতর্কের মুখে, দুর্নীতির অভিযোগে সরকার বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল এবং গণমাধ্যম থেকে সিভিল সোসাইটি বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জায়গায় অনড় ছিলেন। পরিষ্কার বলেছিলেন, কোনা দুর্নীতি হয়নি। কানাডার আদালতের রায় শেখ হাসিনার পক্ষে গেলে আমরা সেদিন যারা সমালোচনা মুখর হয়েছিলাম তাদের সবার মুখে চুন পরেছে। সবাই সেদিন বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মাসেতুর কাজ সম্ভব নয়, সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করবো। শেখ হাসিনা দেশের বাইরে তার মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের  স্প্যান বসিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ পৃথিবীর সামনে দৃশ্যমান করেছেন। এটি শেখ হাসিনার দৃঢ়তার প্রতি কোনো স্তুতিবাক্য নয়, নির্মোহ সত্যকে স্বীকার করে নেয়া। আমরা সেদিন পদ্মা সেতু চেয়েছি, আমরা উন্নয়ন চেয়েছি, চেয়েছি দেশ এগিয়ে যাক। দেশের ওপর কলংকের অভিযোগ আসায় আমরা আর্তনাদ করেছি। আমাদের অাশংকা, অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার কথাই সত্য হয়েছে। জাতি হিসাবে আমরাই বড় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন, দুর্নীতির কলংক থেকে আমাদের তিনি মুক্তই করেননি, পদ্মাসেতুকেও দৃশ্যমান করেছেন। তিনি ঠিকই বলেছে, আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা পারি। আমরাও মেনে নিয়েছি, আপনিই পারেন- একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, শক্তিশালী সংসদীয় গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ আমাদের প্রত্যাশা। আর আওয়ামী লীগের আসন ভিত্তিক একক প্রার্থী দলীয় ঐক্যের ওপর মনোনয়ন দিতে।  প্রতি আসন জুড়ে থাকা নূর মোহাম্মদদের ডাকুন। কোথায় কাকে মনোনয়ন দিবেন তার নাম বলে বাকিদের বলে দিন। আপনার আনুগত্যের বাইরে কেউ নয়।
 
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বাধিক পঠিত