• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ

ট্রাকঘাট এলাকা থেকে ইটবালু ব্যবসা অপসারণের সিদ্ধান্ত

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে গত মাসের অর্থাৎ জানুয়ারি ২০১৯-এর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত তথ্য বিবরণী তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ জামান। তিনি জানুয়ারি মাসে পুলিশ, ডিবি পুলিশ, কোস্টগার্ড, টাস্কফোর্স, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অভিযান, আটক, উদ্ধার এবং মামলার বিবরণ তুলে ধরেন।
উত্থাপিত তথ্য বিবরণীর উপর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেন। সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, জানুয়ারি মাসে চাঁদপুরে পুলিশের বেশ ক’টি সফল অভিযান এবং তৎপরতা ছিলো সন্তোষজনক। বিশেষ করে দিনের বেলা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তালা ভেঙ্গে ও গ্রিল কেটে চুরি, মোটরসাইকেল চুরির সরঞ্জামাদিসহ এই চোর চক্রকে চিহ্নিত করা, আটক করা এবং বিপুল পরিমাণ চোরাই স্বর্ণ ও রূপা উদ্ধারসহ আন্তঃজেলা সোনা চোর চক্রের সদস্যকে আটক করায় সভায় জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এছাড়া চাঁদপুর শহরের একটি অঞ্চল থেকেই ৪৬ জন মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী সদর মডেল থানায় এসে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পুলিশসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তবে কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলে সভায় মন্তব্য করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান সভায় উত্থাপিত তথ্য বিবরণীর প্রতিটি বিষয়ের ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জবাবদিহি চান। এডিএম’র নেতৃত্বে বড়স্টেশন মাছঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫ মণ জাটকা উদ্ধার করা হলেও ওই ব্যবসায়ীকে কেনো আটক করা হলো না তা এডিএম’র কাছ থেকে জানতে চান জেলা প্রশাসক। তখন এডিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, দোকানদার পালিয়ে গেছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তখন জেলা প্রশাসক বললেন, তাকে পরে হলেও আটক করা দরকার ছিলো।
জেলা প্রশাসক চাঁদপুরের কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জবাবদিহি চান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সন্তোষজনক ছিলো না বিধায় শুধু মামলা দায়েরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর কার্যক্রম আরো গতিশীল করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি। কোস্টগার্ডের কার্যক্রম বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কোস্টগার্ডের কাজ তো শুধু জাল আটক করা  নয়। চোরাচালান ও মাদক পাচারের ক্ষেত্রে চাঁদপুরের নদীপথ অন্যতম রুট। কোস্টগার্ডকে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে নদীপথে মাদক পাচারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে কোস্টগার্ডকে। চাঁদপুরের বিশাল ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদীপথকে অপরাধীদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম বলেন, চাঁদপুর শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের জেলা। তাই এ জেলার সার্বিক বিষয়ের দিকে সবাই নজর রাখে। বিশেষ করে শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম, দুর্নীতিমুক্তভাবে পরীক্ষা নেয়া, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা এসব বিষয়ে আমরা খুব সোচ্চার। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার সময়ে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়টি আমরা অনেকটা নিশ্চিত করেছি। তারপরও লোকচক্ষুর আড়ালে যদি কোথাও কোনো কোচিং সেন্টার খোলা রাখার তথ্য আমরা পাই, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো। তিনি পুলিশ সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিপিএম পদক লাভ করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং চাঁদপুরবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জানান। একই সাথে তিনি চাঁদপুরের প্রশাসনিক সকল সেক্টরে যে চমৎকার সম্পর্কের মেলবন্ধন রয়েছে, তার জন্যেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এটিকে সরকারের কাজকে সুচারুরূপে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলার দিক দিয়ে সবসময়ই ভালো অবস্থানে আছে। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা যে ঘটে থাকে, সেগুলোকে কোনোভাবে ছাড় দেয়া যাবে না। মাদক এবং দুর্নীতির ব্যাপারে একেবারে আপসহীন ও জিরো টলারেন্স মনোভাব সকলের থাকতে হবে। চাঁদপুর শহরের ট্রাকঘাট ও বিআইডব্লিউটিএ এলাকায় ইট বালু ব্যবসা প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বলেন, নদীর পাড় দখল করে এ ব্যবসা সেখানে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু আবারো ব্যাপক পরিসরে এখন সে অবৈধ ব্যবসা সেখানে চলছে। এ সব উচ্ছেদ করতে তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে লোকবলসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌরসভা থেকে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা আফরোজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ অ্যাডঃ শেখ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

 

সর্বাধিক পঠিত