• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

গতকাল ছিলো আন্তর্জাতিক যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস

ফরিদগঞ্জে এক বছরে ৪৭ নারী ধর্ষণের শিকার

প্রকাশ:  ০৫ মার্চ ২০১৯, ১১:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ফরিদগঞ্জে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নারী ধর্ষণের ঘটনা। ফরিদগঞ্জ থানার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ বছরে ৪৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে ধর্ষণের পর এখানে কোনো নারী হত্যার শিকার হয়নি।
    থানা এবং পত্রিকার তথ্য ছাড়াও সমাজে অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। লোকচক্ষুর আড়ালে ঘটছে ধর্ষণ, মানসম্মানের ভয়ে অনেক নারী গোপনই রাখছেন ভয়ংকর এবং তিক্ত এ অভিজ্ঞতা। অবুঝ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও রক্ষা পাচ্ছেন না ধর্ষকের হাত থেকে। প্রতিবন্ধীরাও ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। নিকটাত্মীয়ের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনাই বেশিরভাগ ধামাচাপা দেয়া হয়ে থাকে। ধর্ষণ ছাড়াও নারী এবং শিশু বিভিন্ন ধরনের যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখলেও অজ্ঞতার কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি পরে জানাজানি হলে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ ছাড়াও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে একাধিক নারীর।
    এখানে কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এবং থানাতে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় ফরিদগঞ্জে গত বছর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে কত জন নারীর ওপর, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কত জন নারী, এছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন কতজন নারী-পুরুষ, শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কতজন শিশু ও নারী, যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কতজন নারী, কতজন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সালিস ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কতজন নারী তার কোনো সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ের পরিসংখ্যান থাকলে সমাজে নারী ও শিশু কী রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা জানা যেতো।
    গত বছর উপজেলায় ঘটে যাওয়া উল্লেযোগ্য কিছু ধর্ষণের ঘটনা হলো, ২৫ জানুয়ারি সুবিদপুর দরবার শরীফের পীর আবু বকর সিদ্দিক আতিক উল্লাহ (৫৭)কে ধর্ষণের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে তার ঘরের কাজের মেয়ে দুল্লভী (১৭) ধর্ষণের অভিযোগ আনে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূলে জানা যায়, দুল্লভীর বিয়ের ৭ মাসের মাথায় তার একটি সন্তান হয়। তার স্বামীর দাবি এ সন্তান তার নয়। এটা নিয়ে অনেক দেন-দরবারের পর দুল্লভী ২৪.০১.১৮ তারিখে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ২৭ জানুয়ারি চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া গ্রামে ৬ বছরের শিশু বলাৎকারের শিকার হয়। ১০ মার্চ প্রতিবন্ধী ছেলেকে সরকারি ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা প্রতিবন্ধী ছেলের মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। দীর্ঘসময় পর সেই গৃহবধূ ফরিদগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা করে। আসামী ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক নেতা। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। ২৯ মার্চ ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়ায় শিশু ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। ১৫ দিন পর এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ২৪ মে ফরিদগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষককে আটক করে পুলিশ। ২৮ মে ফরিদগঞ্জে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ১ জনকে আটক করে। ১ জুন ফরিদগঞ্জের ১১নং চরদুঃখিয়ায় সত্তর বছর বয়সী নানার সাথে ১৩ বছর বয়সী নাতনির অবৈধ সম্পর্কের পরিণতিতে নাতনি হয় অন্তঃসত্ত্বা। অন্তঃসত্ত্বা প্রমাণিত হওয়ার পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ২৬ জুন উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদী গ্রামের ১০ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ১ জুলাই ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত যুবককে ১৮ দিন পর আটক করা হয়।
    এ বিষয়ে উপজেলার একমাত্র নারীবাদী সংগঠন ধ্রুপদীর সদস্য সচিব খাদিজা আক্তার রিভা চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সকল ধরনের নির্যাতনের অবসান হবে। নারী যখন বুঝতে পারবে সে দুর্বল নয়, তখনই ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে। সেই সাথে পুরুষদের মন-মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সাথে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কেউ কেউ বলেন, নারীর পোশাকের কারণে সে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে শিশুরা ধর্ষণ হচ্ছে কেনো?
    এদিকে গতকাল ৪ মার্চ ছিলো আন্তর্জাতিক যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস। উক্ত দিবসটিকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসনসহ কোনো সামাজিক সংগঠনই কোনো কর্মসূচি পালন করেনি।