• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জে আসল কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনলেন ইউএনও!

প্রকাশ:  ১১ জুন ২০১৯, ০৯:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাজীগঞ্জে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) বৈশাখী বড়–য়া। প্রকৃত কৃষকদের ধান ক্রয় করার কারণে ইতিমধ্যে প্রভাবশালী গুটি কয়েক কৃষকের চক্ষুশূল হতে হচ্ছে বৈশাখী বড়–য়াকে। গত ক’দিনে এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে উপজেলা পরিষদ চত্বরে। প্রভাবশালী ওই কৃষকরা ধান বিক্রি করতে না পেরে সরকারের এই কর্মকর্তার নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। একেবারে উপজেলা চত্বরে গায়ে গতরে নাদুস-নুদুস বেশ কয়েক ব্যক্তিকে কৃষি কার্ড আর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি হাতে নিয়ে যা-তা বলতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত ওই কৃষকরা ধান বিক্রি করতে না পেরে ফিরে গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখী বড়–য়ার তত্ত্বাবধানে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ২৭৮টন বোরো ধান ক্রয় করা হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত ৩১৭ জন কৃষি কার্ডধারী প্রান্তিক কৃষকের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎপূর্বক ২৬৫ টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। দুর্নীতিরোধ ও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলিত মৌসুমে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে সরকারের ধান ক্রয়ের উদ্যোগে সফলতা আনতে বৈশাখী বড়–য়া কৃষকদেরকে তার নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন। এ সময় এই কর্মকর্তা যথাসম্ভব প্রকৃত কৃষক সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে আনুপাতিকহারে ধান ক্রয়ের জন্যে ঐ কৃষকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির এক পাশে কতটুকু ধান ক্রয় করবেন তার পরিমাণ লিখে স্বাক্ষর করে দেন। ইউএনওর স্বাক্ষর সম্বলিত সেই কাগজ আর ধান নিয়ে সেই কৃষক সোজা চলে যান উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার কাছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইউএনওর স্বাক্ষর আর ধানের পরিমাণ দেখে কৃষক থেকে ধান বুঝে রাখেন। ২৭ মে থেকে ১০ জুন (সোমবার) পর্যন্ত ২৬৫.৪ মে টন ধান ক্রয় কার্যক্রম চলেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে আসা বেশ কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ কৃষকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সবসময় এভাবে সরকার আমাদের মতো সঠিক কৃষক থেকে ধান ক্রয় করলে আমরা লাভবান হতে পারতাম। বেশ কয়েক বছর আগে ধান এনে তা ফেরত নিয়ে বাড়ি গেছেন বলে এই কৃষকরা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর জানান, কার্ড আছে বহু জনের, তবে ধানের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক করে ধান ক্রয় করার কারণে প্রকৃত কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে, পূর্বের মতো সাধারণ কৃষক ঠকছে না।
এ বিষয়ে ইউএনও বৈশাখী বড়–য়া জানান, পুরাতন কৃষি কার্ড নিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তি টার্গেটের চেয়ে বেশি পরিমাণ ধান বিক্রি করতে আমার কাছে আসে। এই জাতীয় গুটি কয়েক লোকের কারণে প্রকৃত কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবে। যেহেতু হাজীগঞ্জে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ এসেছে কম তাই প্রকৃত বিপদগ্রস্ত আর নিতান্ত গরীব কৃষক থেকে বিভিন্ন পরিমাণে ধান ক্রয় করেছি। একজন থেকে ধান ক্রয় না করে ১০ যেন সুবিধা পায় সেজন্যে আমি স্বাক্ষর আর পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা জেলার অন্য কোনো উপজেলায় হয়নি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে হাজীগঞ্জে সরকারিভাবে ২৭৮ টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি মণ বোরো ধান ১,০৪০ টাকা (প্রতি কেজি ২৬ টাকা) করে ক্রয় করেছে সরকার। এ ছাড়াও প্রতি মণ ১,৪৪০ টাকা (প্রতি কেজি ৩৬ টাকা) করে ৫৬৫ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এ কার্যক্রম আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। একজন প্রান্তিক কৃষক থেকে সর্বোচ্চ ৩ টন (৮১ মণ) ধান ক্রয় করা হয়।

 

সর্বাধিক পঠিত