• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অসময়ে চলে গেলেন প্রফেসর মনোহর আলী

প্রকাশ:  ১৯ মে ২০২০, ১০:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের অন্যতম সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোহর আলী চলমান করোনার দুঃসময়ে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়েই ঘুমন্ত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে... রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গতকাল ১৮ মে সোমবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ছেলের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। গত ক'মাস ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। এজন্যে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। কিন্তু করোনা দুর্যোগে আর ফলোআপে যেতে পারেননি। কিছু দিন আগে রাজধানীতে তৃতীয় ছেলের বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে তাঁর যথার্থ চিকিৎসা করানোর সুযোগ পায় নি তাঁর পরিবার। অবশেষে গতকাল বিকেলে তিনি ছেলের বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় চির ঘুমের দেশে পাড়ি জমান। আজ বাদ ফজর বেগম মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডস্থ পৌর গোরস্তানে দাফন করা হবে।

চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়া এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন প্রফেসর মনোহর আলী। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও ৫ ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদে চাঁদপুর শহর সহ পুরো জেলায় গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।

প্রফেসর মনোহর আলী চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক, চাঁদপুর শাখার আহ্বায়ক পদে ৭ বছর সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সনাকের সদস্য ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত

অধ্যাপক মনোহর আলীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার তেতৈয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই মাকে হারান। বাবা স্বল্প শিক্ষিত হলেও অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি তাঁর পাঁচ সন্তানের শিক্ষার জন্য অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন। মনোহর আলী ১৯৫৮ সালে বৃত্তি নিয়ে পঞ্চম শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হন। ঐ বছর কচুয়া থানা থেকে মাত্র তিনজন ছাত্র বৃত্তি পেয়েছিল। তিনি তাদের মধ্যে প্রথম ছিলেন। কচুয়া হাই স্কুল থেকে তিনি ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন চাঁদপুর কলেজে। এ কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন ১৯৬৫ সালে। ঐ বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে সম্মান ও ১৯৬৯ সালে এমএ পাস করেন।

প্রফেসর মনোহর আলীর চাকুরি জীবন শুরু হয় কচুয়া বঙ্গবন্ধু কলেজে ১৯৭০ সালে। সরকারি চাকুরি শুরু হয় ১৯৭১ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজে। ১৮৭২ সালে বদলি হয়ে যান সিলেট এমসি ইন্টার কলেজে। ১৯৮৩ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন সিলেট এমসি কলেজে। ১৯৯২ সালে ঐ কলেজেই তাঁর পদোন্নতি হয় সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে তাঁকে প্রেষণে বদলি করা হয় এইচএসটিটিআই কুমিল্লায়। ১৯৯৬ সালে তাঁকে বদলি করা হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগে। ২০০১ সালে তাঁকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে অধ্যক্ষ রূপে নিয়োগ দেয়া হয় সাতক্ষীরা মহিলা কলেজে। সেখান থেকে ২০০৩ সালে বদলি করা হয় চাঁদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে। চাকুরি জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক। তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে ২০০২ সালে পুরস্কৃত হন। ২০০৪ সালে চাঁদপুর জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষরূপে পুরস্কৃত হন। তিনি টিআইবি'র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুর-এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ৭ বছর (২০০৫-২০১২)। তিনি এ পদে থেকে সিঙ্গাপুরেও যান। তিনি ছিলেন সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর-এর নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি পবিত্র হজব্রত পালন করেন। তিনি একজন সুধী-সজ্জন মানুষ হিসেবে সকল মহলে সুপরিচিত ও শ্রদ্ধেয় ছিলেন।

চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির শোক

প্রফেসর মনোহর আলীর মৃত্যুতে চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির-এর পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।

সর্বাধিক পঠিত