• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি

আমরা জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বর চালু করেছি : জেলা প্রশাসক

প্রকাশ:  ২১ মে ২০২০, ০৩:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশের সাগর উপকূলের পূর্বদিকে সুন্দরবন ঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দিয়ে অতিক্রম করেছে। অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার ছিলো বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।


দপ্তর আরো জানায়, বুধবার বিকেল চারটা থেকে রাত আটটার মধ্যে আম্ফান বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা অঞ্চল অতিক্রম করে। এর প্রভাবে চাঁদপুরে বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় উত্তাল রূপ নেয় মেঘনা নদী। জোয়ারে বৃদ্ধি পায় দুই-তিন ফুট পানি।

 


এদিকে ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান' মোংলা সমুদ্রবন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অফিস। সেই সুবাদে নদীবেষ্টিত চাঁদপুরসহ উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় ছিলো।

 


করোনাভাইরাসের আক্রমণের রেশ চলা অবস্থায় আরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুপার সাইক্লোন আম্ফান দেখা দেয়ায় চাঁদপুরের জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

 


ঘূর্ণিঝড় ঘিরে চাঁদপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। বিশেষ করে দুর্যোগপরবর্তী উদ্ধার, অনুসন্ধান ও ত্রাণ বিতরণের জন্যেই তাদের এ প্রস্তুতি। তবে জেলার হাইমচর, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর উপজেলার নদী তীরবর্তী চর এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আলোচনাতেও বসেছেন।

 


জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জানিয়েছেন, সাইক্লোন শেল্টারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সুপেয় পানি, খাবার ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ গেলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এলজিইডিকে বলা হয়েছে যেসব অঞ্চলের লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হবে, সেসব অঞ্চলের সড়ক এবং ব্রিজে কোনো সমস্যা হলে জরুরিভিত্তিতে তা মেরামত করতে। এছাড়াও ফেরি পারাপার বন্ধসহ আমরা জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বর চালু করেছি।

 


এ প্রসঙ্গে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কেবিএম জাকির হোসেন জানান, চাঁদপুর সদরে ১৮ হাজার ৪শ' জনের জন্যে ২০টি, হাইমচরের ১১ হাজার মানুষের জন্য ২২টি, মতলব উত্তরের ১২ হাজার ২শ' ৮০ জনের জন্য ৮০টি, হাজীগঞ্জের ১৫ হাজার ৪শ' ৫০ জনের জন্য ৪৬টি, কচুয়ার ২ হাজার ৪শ' ৯৭ জনের জন্য ১৯টি, শাহরাস্তির ২০ হাজার ৭শ' জনের জন্য ২২টি, ফরিদগঞ্জের ১০ হাজার ৭শ' ৫০ জনের জন্য ৩১টি এবং মতলব দক্ষিণের ১২ হাজার ৩শ' ৮০ জনের জন্য ৮৪টি সাইক্লোন শেল্টারসহ মোট ১ লাখ ৩ হাজার ৪শ' ৫৭ জনের জন্য ৩শ' ২৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার মানুষ এবং প্রায় ২ হাজার ৭শ' গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

 


এ ব্যাপারে এনডিসি মেহেদী হাসান মানিক জানান, আমরা ২টি উদ্ধারকারী নৌযান সচল রেখেছি। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্ধার অনুসন্ধানের জন্যে ভলান্টিয়ার সার্ভিস হিসেবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫০ জন, রোভার স্কাউটের ৪০ জন সদস্য এবং জেলা স্কাউটের ৩শ' ৩০ জন সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 


চর এলাকাগুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রসঙ্গে এনডিসি মেহেদী হাসান মানিক আরো জানান, ১টি নৌ থানা ও ৫টি নৌ ফাঁড়ির মোট ৮১ জন নৌপুলিশসহ কোস্টগার্ডের ৫০ জন সদস্য উদ্ধার কাজের জন্যে প্রস্তুত রয়েছেন। এর সাথে জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজের জন্যে ৮টি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 


এদিকে জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদরের অন্তর্গত চরাঞ্চলের ২৭ হাজার ৮শ' ৮০ জন, হাইমচরের ২৬ হাজার ২শ' ৪ জন এবং মতলব উত্তরের ২০ হাজার ৮শ' ৯৪ জনসহ মোট ৭৪ হাজার ৯শ' ৭৮ জনের জন্যে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে সদরে ৩শ' প্যাকেট, হাইমচরে ৫শ' প্যাকেট এবং মতলব উত্তরে ২শ' প্যাকেটসহ মোট ১ হাজার প্যাকেট ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

 


সূত্রে আরো জানা যায়, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন তাদের জন্যে ১শ' মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্য কিনতে ১ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য কিনতে আরো ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 


সিভিল সার্জন ডাঃ শাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সময়ের প্রস্তুতিতে জেলার ৯৩টি ইউনিয়নে ১টি করে এবং ৮ উপজেলা হেল্থ কমপ্লেঙ্রে আওতায় ৩টি করে ২৪টিসহ সর্বমোট ১শ' ১৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহের জন্যেও প্রস্তুত রয়েছেন।

 


জেলা তথ্য কর্মকর্তা নূরুল হক জানিয়েছেন, শহরের লোকজনকে নিজ দায়িত্বে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে এবং চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিতে আমরা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি। তবে অবশ্যই যাতে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরে সবাই এ অবস্থান নেয়। সে ব্যাপারেও প্রচারণায় সতর্ক করা হচ্ছে।

 


জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা শাহ্ মুহাম্মদ শোয়েব জানান, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। যেজন্যে চাঁদপুর জেলাকে এখন পর্যন্ত ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত