• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

গাজী ও বকাউল গোষ্ঠীর সংঘাতে আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা থেমে নেই লুটপাট

তুচ্ছ ঘটনায় উত্তপ্ত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন

প্রকাশ:  ১০ জুন ২০২০, ১৩:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ক্রমেই অশান্ত আর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১ মাস ধরে ইউনিয়নে দুটি বংশের পরিবারের মাঝে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা এবং লুটপাট আর শেষ পর্যন্ত একজন হত্যার মত ঘটনা ঘটেছে। তবে হত্যার মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ থেমে গেলেও সমপ্রতি আবার নতুন পন্থায় শুরু হয়েছে শোধ-প্রতিশোধ নেয়ার সংঘাত। এই হত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে প্রতিশোধের মোড়কে গেলো এক সপ্তাহে প্রতি রাতেই চলছে ডাকাতি আর লুটপাটের ঘটনা। এখন পর্যন্ত অসহায় চরবাসীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম প্রায় ২০০ গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় সুবিধাবাদী একটি পক্ষ।

শুধু তাই নয়, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে পুরুষশূন্য দুটি গ্রামের অসহায় নারীদের উপরও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। যা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে অতীতে কখনোই ঘটেনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত পরকীয়া প্রেম, একটি বিবাহ বিচ্ছেদ এবং ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করেই রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর ও শিলারচরের গাজী এবং বকাউল বাড়ির লোকজনের মধ্য এই সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতা চলছে।

জনৈক দুলাল মাঝির স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমকে কেন্দ্র করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এটিকে কেন্দ্র করেই দুটি পরিবারের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়। যা বাড়তে বাড়তে সংঘর্ষ এবং খুনাখুনিতে রূপ নেয়। সর্বশেষ গত ২৮ মে সংঘর্ষে লোকমান গাজী (৬০) এবং মোহাম্মদ বকাউলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনার ৯ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লোকমান গাজী মারা যান। অপরদিকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের গুরুতর আহত মোহাম্মদ বকাউল ১১৮টি সেলাই নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এদিকে ডাকাতি এবং লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে আসমা বেগম নামের এক নারী ইউপি সদস্য পারভেজ রনিকে প্রধান আসামী করে এবং শরাফত আলী গাজী, হারুন গাজী, মমিন আলী হাজী, মনি গাজী, দিদার গাজী, ফয়সাল গাজী, মরণ আলী গাজীসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ক'দিনে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর এবং লগ্গিমারা চরে ৫০টি পরিবারের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০টি গরু-ছাগল ডাকাতি করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। শুধু গরু-ছাগল ডাকাতিই নয়, পুরুষশূন্য ঘরগুলোতে লুটপাটসহ নারীদের শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ডাকাতির শিকার হওয়া অসহায় পরিবারগুলো হলো : সিদ্দিক মাল, ইয়াকুব বকাউল, ইসমাইল বকাউল, বিল্লাল বকাউল, শহীদ বকাউল, আবুল খায়ের, হানিফ বকাউল, আনোয়ার হোসেন, লিটন বকাউল প্রমুখ।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ডাকাতি হওয়া গরু-ছাগলগুলো রাতের অাঁধারে পার্শ্ববর্তী শরিয়তপুর জেলার কাচিকাটা, চরভাগা ইউনিয়ন এবং মতলব উত্তরের জহিরাবাদ ইউনিয়নে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া মামলায় আনন্দবাজারে গা ঢাকা দেয়া কিছু লোকের কাছ থেকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া এবং হত্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়ার কথা বলে একটি মহল ৫০ হাজার টাকা আনারও অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী হযরত আলী বেপারী বলেন, আমাদের এই ইউনিয়নটি শান্তিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রতিটি পরিবারই একে অন্যের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু গত ১ মাস ধরে সামান্য একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে এখন অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি নিজে বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদের কথা শুনছে না। যার কারণে ইতিমধ্যে এক পক্ষের একজন মুরবি্ব লোকের মৃত্যু এবং অপর পক্ষের একজন মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। আমিও চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ন্যায় বিচার পাক।

চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী আরো বলেন, তবে এই ঘটনাকে পুঁজি করে তৃতীয় একটি পক্ষ গ্রামের অসহায় পরিবারের বাড়ি-ঘরে ডাকাতি আর লুটপাট করছে। নারীদের শরীরেও হাত দিচ্ছে। যা খুবই ন্যাক্কারজনক। যারা গরিব মানুষের গরু-ছাগল চুরি করছে এবং মা-বোনের সাথে খারাপ আচরণ করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক।

চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, রাজরাজেশ্বরের মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে। গরু ডাকাতির ঘটনা আমরা জেনেছি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। আমরা আদালতে ধারা পরিবর্তনের জন্যে আবেদন করেছি। এই ঘটনায় দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বাধিক পঠিত