• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনায় মৃতদের দাফন কাজ : এ যেনো আরেক যুদ্ধের প্রস্তুতি

প্রকাশ:  ১০ জুন ২০২০, ১৩:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শতবর্ষী মানুষগুলোও এ দৃশ্য দেখে নি কখনো! কোনো মানুষ মারা গেলে তার স্বজনরা লাশকে ঘিরে বিলাপ করবে, লাশের পাশে বসে যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী ধর্ম গ্রন্থ পাঠ করবে। এরপর মৃত ব্যক্তি মুসলিম হলে তার লাশ গোসল দিবে, কাফনের কাপড় পরাবে। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই একত্রিত হয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করেন। জানাজা শেষে একজনের পর একজন লাশের খাটিয়া কাঁধে নিয়ে গোরস্তানে চলে যাবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হবে। সব কিছু মিলে এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয় মৃত ব্যক্তির বাড়ি এবং আশপাশ জুড়ে। মৃত্যুর খবর শুনে অনেক দূর থেকেও আত্মীয়-স্বজনরা চলে আসে। মৃত ব্যক্তির বাড়ি ঘর জুড়ে মানুষ গিজগিজ করতে থাকে। এমনই দৃশ্য শত শত বছর যাবৎ দেখে আসছে সকলে।


কিন্তু বর্তমানে কোভিড- ১৯ তথা করোনা ভাইরাস নামে এমন এক রোগ মানুষের উপর মহামারী রূপে ভর করেছে, যে রোগে মানুষ মারা গেলে প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজন দূরের কথা নিজের রক্তের পরিবারের লোকজনও লাশের কাছে আসে না। যদিও এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মৃত ব্যক্তি থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। তারপরও মানুষ লাশের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে গোসল দেয়া এবং দাফন কাফনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। এই বিশেষ ব্যবস্থাটাই যেনো একরকম যুদ্ধের প্রস্তুতি। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরিধান করে লাশ গোসল দিতে হয় এবং কাফনের কাপড় পরাতে হয়। এরপর দেখা যায় যে, সেই নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকজনই জানাজায় অংশগ্রহণ করে থাকে। যদিও এটাও কোনোভাবেই কাম্য নয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষগুলোকে গোসল এবং দাফন কাফন বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনের সাথে। চাঁদপুর সদরে তিনিই এ কাজটির ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। শুধু সদর উপজেলায়ই নয়, চাঁদপুর পৌর এলাকায়ও তিনি এ কাজটির যোগান দিয়ে থাকেন। যদিও পৌর এলাকার দায়িত্ব তাঁর নয়। কিন্তু দাফন কাফন বিষয়ে গঠিত পৌর কমিটির তেমন কোনো সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় অগত্যা সদর ইউএইচএফপিওকেই মানবিক কারণে এ দায়িত্বটি নিতে হচ্ছে।

ডাঃ পলিন জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার গোসল দেয়াসহ দাফন কাফনের কাজটি সম্পন্ন করা অনেক দুরূহ কাজ। এর জন্যে কমপক্ষে পাঁচ জন স্বেচ্ছাসেবী লাগে। আর এরা প্রশিক্ষিত হতে হয়। এদের প্রত্যেকের জন্য সুরক্ষা পোশাক লাগে। লাশের বডি ব্যাগের প্রয়োজন হয়। সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়। ডাঃ পলিন জানান, একজন মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন সম্পন্ন করতে যা যা উপকরণ লাগে সেগুলো হচ্ছে বডিব্যাগ ১টি, পিপিই পাঁচটি, মাস্ক ১০টি, গ্লাভস্ ২০টি, বিস্নচিং পাউডার সলিউশন ১টি, হ্যাঙ্সিল ১টি ও ফেস শিল্ড ৫টি। শুধু বিস্নচিং পাউডার ছাড়া অন্য সব উপকরণ সরকার থেকে দেয়া হয়। এসব উপকরণের মধ্যে মাঝেমধ্যে গ্লাভস, বডি ব্যাগসহ কিছু উপকরণের সঙ্কট পড়ে যায়। দু একটি সময় এমন অবস্থাও হয়েছিল যে, উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে, কিন্তু কিছু উপকরণ না থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা সম্ভব হয় নি। তবে সে রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষায় পরবর্তীতে নেগেটিভ এসেছে। তাই তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অথবা এ ভাইরাসের সবধরনের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তখন স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন কাফনের কাজটি সম্পন্ন করাটাই যুক্তিযুক্ত। এছাড়া কিছু উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সেটা সন্দেহের মধ্যে থেকে যায়। তখন সে লাশ বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন না করলেও চলে। এ কথাটি তিনি এজন্য বলেছেন, যেহেতু মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, এতো উপকরণ সবসময় হাতের নাগালে থাকেও না, সেজন্যে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া বিশেষ ব্যবস্থায় দাফনের কাজটি না করলেও হয়।