• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনার নমুনা টেস্ট : চাঁদপুরের রিপোর্ট আসতে দশ দিনও পার হয়ে যায় বাড়ছে সংক্রমণ

প্রকাশ:  ১৭ জুন ২০২০, ১৪:২৫
এএইচএম আহসান উল্লাহ
প্রিন্ট

করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্যে চাঁদপুর জেলা থেকে যেসব নমুনা বা স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয় সেগুলো ঢাকা পাঠানো হয়। ঢাকায় দুই জায়গায় এসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট একদিন পর চলে আসে, আর অপর প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট আসতে কমপক্ষে সপ্তাহ পার হয়ে যায়। শুধু সপ্তাহ নয়, এমনও দেখা গেছে যে, স্যাম্পল দিয়েছে দশ দিন হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট এখনো আসে নি। অথচ রিপোর্ট আসার আগে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কোন্ মানুষটি করোনায় আক্রান্ত। আর এ সময়ের মধ্যে স্যাম্পল দেয়া মানুষগুলো সব জায়গায়ই আসা-যাওয়া করে, সর্বত্র বিচরণ করে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এক সপ্তাহ কি দশদিন পর যখন ওই মানুষগুলোর পজিটিভ রিপোর্ট আসে, তখন এক ভয়ানক পরিস্থিতি অাঁচ করা হয়। সেটি হচ্ছে, পজিটিভ রিপোর্ট আসা অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানুষগুলো এতোদিন যাবৎ অবাধে বিচরণ করে কত মানুষকে যে সংক্রমিত করলো, তার কোনো হিসেব নির্ণয় করা যায় না। ফলে এভাবেই চাঁদপুরে ভয়ানকভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।


কোভিড-১৯ একটি গুপ্ত ঘাতক। এটির দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলো কি না তা টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যায় না। তবে নিশ্চিত হওয়ার আগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে নানা লক্ষণ দেখা দেয়। সেই লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সন্দেহভাজনদের থেকে স্যাম্পল বা নমুনা নেয়া হয়। আর এ নমুনা সংগ্রহ করার সময় শতভাগ সুরক্ষা পোশাক পরিধান করে নিতে হয়। নমুনা হিসেবে যা সংগ্রহ করা হয় তা হচ্ছে মানুষের নাকের ভেতর থেকে এবং গলার ভেতর থেকে নিঃসরণ নেয়া হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার জন্যে ঢাকা মোহাম্মদপুরস্থ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠানো হয়। প্রথমটা অর্থাৎ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি। আর পরেরটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এমডি হচ্ছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান করোনার জীন রহস্য উন্মোচনকারী প্রফেসর ড. সমীর কে সাহা। আর তাঁর মেয়ে ড. সেঁজুতি সাহাও এই প্রতিষ্ঠানে বাবার সাথে কাজ করছেন। তাঁদের দুজনের বদান্যতাতেই মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাঁদপুরের স্যাম্পল গেলে একদিনের মাথায় রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়। এখানকার রিপোর্টও নির্ভরযোগ্য বলে চাঁদপুরের স্বনামধন্য চিকিৎসকগণ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ মন্তব্য করেছেন। তবে এই প্রতিষ্ঠানে একদিনে চাঁদপুরের ১শ' জনের বেশি স্যাম্পল তারা গ্রহণ করেন না এবং পরীক্ষাও এর বেশি করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়েই অবশিষ্ট স্যাম্পলগুলো সংশ্লিষ্টদের সরকারি প্রতিষ্ঠান আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠাতে হয়। এই প্রতিষ্ঠানে যেসব স্যাম্পল যায় সেগুলোর রিপোর্ট আসতেই কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর স্যাম্পল নেয়ার পর এতোদিন সময় পার হয়ে গেলে সেটার কার্যকারিতা তেমন একটা থাকে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কজন চিকিৎসকও বলেছেন। তাছাড়া অন্য যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাও খুবই ভয়াবহ। সেটি হচ্ছে, রিপোর্ট আসার মাঝখানের সময়টাতে স্যাম্পল দেয়া মানুষগুলো অবাধে চলাফেরা করতে থাকে। রিপোর্ট আসার পর যখন ওই মানুষগুলোর মধ্যে পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়, খুবই দুশ্চিন্তার উদ্রেক হয় যে, এই করোনা আক্রান্ত রোগী এ ক'দিনে কতজনকে যে সংক্রমিত করলো! এ জন্যেই চাঁদপুরে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখন প্রতিদিন চাঁদপুর থেকে একশ'র উপরে দেড়শ' থেকে পৌনে দুইশ' কি দুইশ' স্যাম্পল ঢাকা পাঠানো হয়। প্রতিদিন ঢাকায় দুই প্রতিষ্ঠানেই একশ'র মতো স্যাম্পল পরীক্ষা ছাড়া সেখানে থেকে যায়। এভাবে জমতে জমতে চাঁদপুরের স্যাম্পল গতকাল পর্যন্ত পেন্ডিং অবস্থায় আছে ৬৭২ জনের। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরের স্যাম্পল ঢাকা গিয়ে জট লেগে যাওয়ার বিষয়টির সমাধান যদি না করা হয় তাহলে সার্বিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। এ বিষয়টি তিনি সেদিন করোনা বিষয়ক ভার্চুয়াল সভায় চাঁদপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে বলেছেন সমাধানের জন্যে। মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি দেখবেন বলে।

সর্বাধিক পঠিত