• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আকস্মিকভাবে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশ:  ১৭ জুন ২০২০, ১৪:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সোমবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নিকটতম প্রতিবেশী স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার চৌধুরীসহ আরো অনেকের সাথে তিনি কথা বলেছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থাবস্থায়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর জানা গেলো তিনি আর বেঁচে নেই (ইন্না...রাজেউন)। সেই তিনি হচ্ছেন চাঁদপুর শহরের অত্যন্ত পরিচিত মুখ প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক, সমাজসেবক, সংগঠক ও বিদ্যোৎসাহী। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে চাঁদপুর শহরসহ জেলার সর্বত্র গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।


গতকাল আসরের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রসিদ্ধ গ্রাম অলিপুরে পিতা-মাতার কবরের পাশে প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে চির সমাহিত করা হয়। এর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর শহরের তালতলা বাসস্ট্যান্ডস্থ মসজিদে গোর-এ-গরিবা প্রাঙ্গণে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুন ২০২০) বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডস্থ নিজ বাসায় ফজরের নামাজের জন্যে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেন। নামাজ আদায় ও বারান্দায় পায়চারী করেন। তারপর নিজে গরম পানি করে গ্লাসে করে সেটি পান করতে যান। কিন্তু গ্লাসের পুরো পানি তিনি পান করতে পারেননি। সম্ভবত বুকে প্রচ- ব্যথা অনুভব করে বিছানায় গা এলিয়ে দেন। পাশে ঘুমাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী ফাতেমা হোসেন লাভলী এবং অন্য কক্ষে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হোসেন আসিফ সজীব। কেউ দেখলো না এবং কাউকে তিনি কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। ওই যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন, নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন, বস্তুত সে নিদ্রা ছিলো তাঁর শেষ নিদ্রা। সকাল আটটার দিকে স্ত্রী-পুত্র নাস্তার প্রয়োজনে তাঁকে সেই নিদ্রা থেকে জাগাতে গেলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই জাগলেন না। এমতাবস্থায় নিকটাত্মীয় (যিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত) ডাঃ ফয়সালকে খবর দেয়া হলো। তিনি ছুটে আসলেন এবং দেখলেন গ্লাসের বাকি পানিটুকু ততক্ষণে কিছুটা গরম আছে, কিন্তু প্রকৌশলী দেলোয়ারের শরীরের গরমটুকু স্বাভাবিক মাত্রায় নেই। ডাঃ ফয়সাল নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করে বললেন, ফুফা বেঁচে নেই। তিনি কার্ডিয়াক অ্যাটাকে মারা গেছেন। মুহূর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়লো সবখানে। খবর পেয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর বাসায় ছুটে যান এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজসেবাসহ বহুবিধ কর্মকা-ের সাথে প্রকৌশলী দেলোয়ারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাঁর মৃত্যুসংবাদে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শোকের আবহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

মৃত্যুকালে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। তিনি শোকার্ত স্ত্রী, ২ পুত্র, ১ কন্যা, এক ভাই ও পাঁচ বোনসহ বহু আত্মীয়স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকুরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন। তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ চাঁদপুরের অন্যান্য পত্রিকা, জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি করেন। লোকসাহিত্য গবেষণার জন্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা ও সাহিত্য চর্চায় অবদানের জন্যে জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পদকসহ বহু পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন। রোটারী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনি সর্বশেষ রোটারী জেলা-৩২৮২-এর ২০২০-২১ রোটারী বর্ষের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সর্বাধিক পঠিত