• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনা দুর্যোগেও বিদ্যুৎকর্মীদের নেই সুরক্ষা উপকরণ

প্রকাশ:  ১৯ জুন ২০২০, ১১:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যারা মানুষকে আলো বিলিয়ে দিয়ে নিরাপদে রাখার কাজ করে যাচ্ছেন, করোনা মহামারীতেও তাদের নিজেদের জীবন রক্ষায় নেই কোনো সুরক্ষা পোশাক। এমনকি কাজের সময়ে নিজের শরীরের সুরক্ষায় নেই কোনো উপকরণ। তারপরও নিশ্চিন্ত ও নিরবচ্ছিন্ন আলোর মধ্যে জনগণকে রাখার কাজ করে যাচ্ছেন তারা।


জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর্ চাঁদপুরে বিদ্যুতের লাইনম্যানসহ বিভিন্ন পদে প্রায় শতাধিক কর্মচারী রয়েছেন, যারা সরাসরি মাঠে জনস্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ এরা জনগণের সাথে সরাসরি প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো দুর্যোগ হোক না কেনো, এদের নিরলস শ্রমেই জনগণ পাচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন আলোর ঝিলিক বা বিদ্যুৎ। রাত কিংবা দিন, সময়-অসময় কোনো কথা নেই, বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হলেই এদের সর্বাগ্রে অর্থাৎ অগ্রভাগে থেকে জনস্বার্থে কাজ করে যেতে হচ্ছে। করোনা দুর্যোগে এরাও অগ্রভাগের সৈনিক বৈকি।

 


এমনিতেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক তাদের বিদ্যুৎ কর্মীদের শর্টসাকিট বা বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থেকে বাঁচার জন্যে দেয় না কোনো সুরক্ষা পোশাক বা উপকরণ। যার ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বা বিদ্যুৎলাইনের বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই তাদের জীবন দিতে হয়। শুধু বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে জীবনে পঙ্গুত্ব বরণ করে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছেন কেউ কেউ-এমন নজিরও রয়েছে। আবার বিদ্যুৎলাইন মেরামত করতে গিয়ে খুঁটির উপরে উঠে কাজ করা অবস্থায় শর্টসার্কিটে পুরো শরীর ঝলসে গিয়ে মৃত্যু ঘটায় লাশ ওই খুঁটির তারে ঝুলে থাকার নজিরও রয়েছে। তারপরও তারা জনস্বার্থে নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বা আলোর মধ্যে রাখার কাজ করে যাচ্ছেন।

 


একটি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর্ চাঁদপুরে সদর উপজেলা ও শহরে শতাধিক কর্মচারীর বাইরেও কিছু অনিয়মিত বা অস্থায়ী কর্মচারীও রয়েছে।

 


করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে সকল পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের সুরক্ষার পোশাকসহ বিভিন্ন উপকরণ পেয়ে থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে বা কারো পক্ষ থেকে এদের জন্যে বরাদ্দ করা হয়নি কোনো সুরক্ষার উপকরণ।

 


জানা যায়, করোনা দুর্যোগ শুরু হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর্ চাঁদপুরের পক্ষ থেকে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একটি করে মুখে ব্যবহারের মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। এ একটি মাস্কই হলো কেবল তাদের প্রাপ্তি। যার ফলে প্রতিনিয়ত তারা এখন দুটি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এটা যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা। যার ফলে নিজেকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে বিদ্যুৎ কর্মীরা নিজের অর্থে যতটুকু সম্ভব উপকরণ ক্রয় করছেন। এ করোনা দুর্যোগে অগ্রভাগে যাদেরকে সৈনিক হিসেবে গণ্য করা হয়, সে তালিকায় তারাও রয়েছে। অথচ এই সৈনিকদের কাছে নেই শত্রুকে মোকাবেলা করার অস্ত্র। এজন্যে তাদের নেই কোনো আক্ষেপ বা অভিযোগ। দেশবাসীকে এ দুর্যোগ থেকে হেফাজত করার জন্য তারাও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চান।

 


এ বিষয়ে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ সিবিএ (বি-১৯০২) চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহআলম তালুকদারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সকল দুর্যোগেই বিদ্যুৎ শ্রমিকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বা আলো রাখতে সবসময় কাজ করেন। কিন্তু কোনো দুর্যোগেই বিদ্যুৎ শ্রমিকদের জন্যে কোনো স্পেশাল বরাদ্দ নেই। তারা উভয়েই বলেন, করোনা দুর্যোগের মতো মহামারিতে বিদ্যুৎ শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্যে কোনো ধরনের কোনো উপকরণ সরকারের পক্ষ থেকে বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। অথচ এরাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন। উভয়ই একই সুরে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনা দুর্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে যে প্রণোদনার ঘোষণা করা হয়েছে, সে প্রণোদনা সহায়তার বিষয়ে সরকার যেনো এ বিদ্যুৎ কর্মচারীদের দিকে সুদৃষ্টি দেন। কারণ আমরাও এ দুর্যোগে অগ্রভাগের সৈনিক। সর্বোপরি দুই সিবিএ নেতা করোনা দুর্যোগে জনগণকে সচেতন হয়ে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মেনে চলার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে এ দুর্যোগ থেকে আল্লাহ যেনো হেফাজত করেন সে কামনা করেন।

সর্বাধিক পঠিত