• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনা শনাক্ত ও সুস্থতা উভয় বিবেচনায় ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকা সর্বোচ্চ

প্রকাশ:  ২৩ জুন ২০২০, ১০:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফরিদগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও অর্ধেক পার হয়েছে। এতদিন পৌর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও বর্তমানে পৌর এলাকায় আনুপাতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। একইভাবে সুস্থতার হারও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে পৌর এলাকায় ২/৩ জন রয়েছে চিকিৎসাধীন। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে ল্যাবরেটরীর দায়িত্বে থাকা টেকনেশিয়ান গোলাম ফারুক প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েকর্মরত থাকলেও বসবাস করতেন চাঁদপুরে। পরবর্তীতে একে একে বাড়তে থাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ জন। এর মধ্যে ২১ জুন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩২ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ২০ জন। এর মধ্যে চাকুরি সূত্রে বসবাস করা, ঢাকা থেকে ফরিদগঞ্জে নিজ বাড়িতে আসা লোকজন এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফও রয়েছেন। গত ১৮ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কাছিয়াড়া গ্রামে আগত শাহআলম পাটওয়ারীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পৌরসভায় প্রথম করোনা শনাক্ত শুরু হয়। পরবর্তীতে তার পরিবারের তিন সদস্যও আক্রান্ত হয়। যার রিপোর্ট আসে ২৩ মে। এরা হলেন : মনোয়ারা বেগম, হিমু আক্তার ও কনিকা আক্তার। যারা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। এছাড়া ২৩ মে কাছিয়াড়া গ্রামের পাঠান বাড়ি সংলগ্ন ঔষধ কোম্পানীর কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এবং পশ্চিম বড়ালি গ্রামের শফিকুর রহমানের শরীরেও করোনা ধরা পড়ে। ২৮ মে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ক্যাশিয়ার জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, লাইনম্যান রইছ উদ্দিন করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে জসিম উদ্দিনের দ্বিতীয় রিপোর্ট পজিটিভ আসলেও অন্য দুইজন সুস্থ হয়েছেন। ৩১ মে পশ্চিম বড়ালি গ্রামের আবুল হাসান, ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে স্টাফ সাহাব উদ্দিন, কাছিয়াড়া গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন পাঠান ও কাছিয়াড়া গ্রামের মাহমুদুর রহমান আক্রান্ত হন। তারাও বর্তমানে সুস্থ হয়েছেন।

গত ২ জুন পশ্চিম বড়ালি গ্রামের কামরুরুন্নাহার শান্তা করোনা আক্রান্ত হন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ৩ জুন স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে স্টাফ ফারুক হোসেন ও মোস্তফা হাজী করোনা আক্রান্ত হন। গতকাল ২২ জুন সোমবার তারাও সুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ৭ জুন কাছিয়াড়া গ্রামের শহিদ উল্যা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তালিকায় এখনো চিকিৎসাধীন থাকলেও তার পরিবারের সদস্যদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। দুই দফা সিআরপি চেস্ট রিপোর্টে তার সুস্থতা নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া তিনিসহ ওই পরিবারের সকল সদস্যের সিআরপি টেস্ট করিয়ে কারো শরীরেই ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই বলে নিশ্চিত হয়েছেন। গত ১২ জুন পূর্ব বড়ালি গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবুল হোসেন, হাসপাতালের স্টাফ জেসমিনের করোনা পজিটিভ আসে। তারাও বর্তমানে আরোগ্য হওয়ার পথে। এছাড়া ১৫ জুন পৌর এলাকার রাজু নামে একজন সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত হন। তার বিষয়ে কিছু জানা যায় নি।

পৌর এলাকার করোনা আক্রান্তদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২/৩জন ছাড়া অন্যরা সুস্থ হয়েছেন। তাছাড়া গত ৭ দিনে পৌর এলাকায় নূতন করে কোনো করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় নি।

এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জেলার ৬টি পৌরসভা ও একটি ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউনের অনুমোদনের জন্যে রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে ফরিদগঞ্জ পৌরসভাও রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র আক্রান্তের হিসাব দিয়ে রেড জোন ঘোষণা করলে তা কতটুকু বাস্তব সম্মত হবে তা নিয়ে কথা থেকেই যায়। কারণ বর্তমানে করোনা গ্রাম পর্যায় ছড়িয়ে গেছে বলে প্রতিদিনের রিপোর্ট সে তথ্য দেয়। তাই কঠোর লকডাউন দিতে হলে পুরো উপজেলা বা জেলায় দেয়ার বিকল্প নেই বলে সচেতন মহলের ধারণা।

বিগত সাধারণ ছুটির আদলে চলমান লকডাউনের সময় দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত শহরাঞ্চলেই কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর হয়েছে। গ্রামে লোকজন লকডাউন নিয়ে চোর-পুলিশ খেলেছে। অন্তত ফরিদগঞ্জ উপজেলার সর্বশেষ করোনা আক্রান্তের চিত্র তা-ই বলে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী করোনায় ফরিদগঞ্জের চিত্র তুলে ধরে বলেন, করোনায় ফরিদগঞ্জে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কিছু লোক বাইরে থেকে আসা বা চাকুরি সূত্রে ফরিদগঞ্জে অবস্থান করা ব্যক্তি। তিনি জানান, পৌর এলাকায় এক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেলেও এখন অনেকটা কম। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই সুস্থ হয়েছেন এবং সুস্থতার পথে।

রেড জোন বিষয়ে তিনি বলেন, রেড জোন চিহ্নিতকরণ হয় সাধারণত শনাক্ত বিবেচনায় । জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সেই বিবেচনাতেই করেছে।