দুবছর ধরে নির্জনকক্ষে শিকলবন্দি এক মেধাবী যুবক!
মানসিক ভারসাম্যহীন মেধাবী যুবকটি প্রায় দুই বছর শিকলবন্দি অবস্থায় পৃথিবীর আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত হয়ে একটি নির্জন কক্ষে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। নিয়মিত মাদক সেবন করায় যুবকটিকে একাকিত্ব জীবন-যাপন করতে বাধ্য করেছে অতিষ্ঠ পরিবারের লোকজন। বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয় সে জন্য পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সুঠাম দেহ ও সুদর্শন চেহারার অধিকারী মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবকের নাম মোঃ হাসনাত (৩৫)। তার গ্রামের বাড়ি হচ্ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং উত্তর রূপসা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ দক্ষিণ বদরপুর গ্রামে। তার বাবা আবুল খায়ের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
গতকাল শুক্রবার হাসনাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পায়ে শিকলবন্দী হয়ে সে দাঁড়িয়ে একটি বাটিতে করে খাবার খাচ্ছেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সেই ঘরের এক কোণে একটি গর্ত করে রাখা হয়েছে। পাশেই রয়েছে তার ঘুমানোর জন্যে একটি কাঠের চৌকি। অন্ধকার এই ঘরের মধ্যে প্রায় দুই বছর যাবৎ হাসনাতকে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ সময় সুঠাম দেহ নিয়ে নির্জন কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা হাসনাতের ছবি তুলতে দেখে তার মা ও বোন এ প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে জানতে চান কেনো হাসনাতের ছবি তোলা হয়েছে। তবে ওই সময় হাসনাতের বাবা আবুল খায়ের বাড়িতে ছিলেন না।
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী জানায়, ৩ ভাই ৩ বোনের মধ্যে হাসনাত সবার বড়। এইচএসসি পাস করা মেধাবী হাসনাত একবার বিদেশে গিয়েছিলেন। দেশে আসার পর মাদকসেবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে হাসনাতও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদক ক্রয়ের টাকা না পেয়ে তার বাবা-মায়ের সাথে শুরু করেন উচ্ছৃৃঙ্খল আচরণ। নিয়মিত মাদক সেবনের দায়ে হাসনাত এক পর্যায়ে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি আপন পর কাউকে চিনতে না পেরে যার-তার সাথেই শুরু করেন খারাপ আচরণ। নিরূপায় হয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ির একটি দোচালা টিনশেড শিকলবন্দী করে রাখতে বাধ্য হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসনাতের বাবা আবুল খায়েরের যথেষ্ট অর্থ আর সম্পদ রয়েছে। হাসনাতের প্রাপ্য চিকিৎসা থেকে তাকে পরিকল্পিতভাবেই একটি নির্জন কক্ষে পশুর মতো বেঁধে রাখার মতো শিকলবন্দী করে রেখে পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
হাসনাতের বাবা আবুল খায়ের বলেন, আমার মেধাবী ছেলে হাসনাত মাদকসেবীদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে সেও এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে যায়, পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার চিকিৎসার জন্যে বহু টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ‘মানসিক হাসপাতালে ভর্তি না রেখে দুবছর যাবৎ নিজ বাড়ির নির্জন কক্ষে শিকলবন্দী করে রেখেছেন কেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও ক্ষয়ক্ষতি করার কারণে দুই বছর নয়, অল্প ক’দিনের জন্যে তাকে বেঁধে রেখেছি মাত্র। ক’দিন পরই তাকে শিকলমুক্ত করে চিকিৎসার জন্যে আবার ঢাকায় নিয়ে যাবেন বলে হাসনাতের বাবা জানিয়েছেন।