• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আড়াইশ’ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্ন এখন বৃক্ষ আচ্ছাদিত

প্রকাশ:  ০৪ জুন ২০২৩, ০৯:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কচুয়া উপজেলার দারাশাহী তুলপাই-মালচোয়া সড়কের পাশে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে চৌধুরী বাড়ি। কালের সাক্ষী হয়ে আজও স্মৃতিচিহ্ন টিকিয়ে রাখা বাড়িটি বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখার জন্য অনেকইে ছুটে আসেন। একসময় যাদের ছিল জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। জমিদারদের দালানকোঠার ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে। এর ইট-সুড়কি খসে খসে পড়ছে। খসে যাওয়া দালানের ইটের ফাঁকে ফাঁকে এখন গজিয়েছে ডুমুর ও বট বৃক্ষ, আর জমেছে শেওলার স্তর। বাড়িটির পূর্ব পাশে দারাশাহী মসজিদের দক্ষিণের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় লিখা সাইনবোর্ড দেখে ধারণা করা হয়, এ বাড়ি ও মসজিদ প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ১২০২ হিজরিতে নির্মাণ করা হয়।
জানা যায়, হযরত দারাশাহ (রহঃ) এক হিন্দু জমিদারের কন্যাকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে তাকে বিয়ে করেন। জমিদার কন্যাকে তার বাবা তাদের জমিদারির কিছু অংশ দান করেন। তাদের সন্তান বদিউজ্জামান চৌধুরী। এক সময় দারাশাহ (রহঃ) মারা যান এবং পাশেই তাকে দাফন করা হয়। তখন বদিউজ্জামান চৌধুরীর ছেলে নুরুজ্জামান চৌধুরী জমিদারের দায়িত্ব পালন করেন। নুরুজ্জামান চৌধুরী তার দাদীর নির্দেশে জমিদারি পরিচালনা করার জন্যে ১২০২ হিজরিতে একটি দালান, একটি মসজিদ ও দিঘি খনন করেন। তিনি যে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন, সেটি বর্তমানে হযরত দারাশাহ (রহঃ) মসজিদ নামে পরিচিত।
জমিদারি পরিচালনা করার জন্যে নুরুজ্জামান চৌধুরী প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে যে দালানটি নির্মাণ করেছেন সেটি এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। দালানটি দোতলা বিশিষ্ট। দালানে জমিদারদের ধন দৌলত রাখার জন্যে একটি কক্ষ ছিলো, সেটিকে আন্ধার মানিক বলা হতো। সে স্থানটি এখনো অন্ধকার রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
জমিদাররা তাদের জমিদারি প্রথা শেষ হলে এখান থেকে চলে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের কাছ থেকে জমিজমা ক্রয় করে বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন। কিন্তু দালানে কেউ বসবাস করছেন না। দালানের পূর্ব পাশে যে মসজিদটি রয়েছে, সেটিকে স্থানীয়রা সংস্কার ও বর্ধিত করে নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন।
স্থানীয় অধিবাসী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে জমিদারদের দালানটি দেখে আসছি। এখানে আমি কাউকে বসবাস করতে দেখিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন পাটওয়ারী জানান, আমার বয়স ৮৫ বছর। এ বাড়িতে জমিদাররা তাদের জমিদারি পরিচালনা করতেন। তবে আমি জমিদারদের বংশধর কাউকে এ বাড়িতে বাস করতে দেখিনি।
এনায়েতপুর দরবার শরীফের পীর গোলাম গাউছ আল কাদেরী জানান, দারাশাহী মসজিদের দক্ষিণের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় লিখা সাইনবোর্ড দেখে ধারণা করা হয়, এ বাড়ি ও মসজিদটি ১২০২ হিজরিতে নুরুজ্জামান চৌধুরী নির্মাণ করেন। জমিদারি প্রথা শেষ হলে তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে তাদের বংশধরদের কেউ এ বাড়িতে বসবাস করছেন না। বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

 

সর্বাধিক পঠিত