• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মেয়র জুয়েলের উদ্ভাবন ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় পাল্টে যাচ্ছে চাঁদপুর শহরের চিত্র

প্রকাশ:  ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একটি শহরকে সুন্দর, বাসযোগ্য এবং নান্দনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে যে সে শহরটির অভিভাবক তথা নির্বাচিত মেয়রের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও সাহসই যথেষ্ট, তার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। তাঁর নেতৃত্বে বর্তমান পৌর পরিষদের বয়স তিন বছর শেষ হয়ে চার বছর চলছে। এরই মধ্যে তিনি এই শহরটির চেহারা পাল্টে দিতে এমন কিছু কাজ করেছেন, করে যাচ্ছেন এবং সে রকম কিছু পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে, যা হয়তো অনেকের ধারণার মধ্যেই নেই। তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তা থেকে তিনি যেভাবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছেন, তা বাস্তবায়ন হলে চাঁদপুর শহরের চেহারা ভিন্নরূপে দেখা যাবে। অপেক্ষা হয়তো আরো ক'বছর করতে হবে।
তাঁর বড় কয়েকটি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি বাইপাস সড়ক করা, শহরের হার্ট পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে বাইপাস সড়ক করা, শহরের বেশ কিছু পুকুর ও জলাধারকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে রিজার্ভ ওয়াটার প্ল্যান্ট হিসেবে প্রস্তুত করা, যাতে করে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ বা বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনায় পানির সঙ্কট দেখা দিলে এসব রিজার্ভ ওয়াটার থেকে পানি সংগ্রহ করে পৌরবাসী আপদকালীন সময়ে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রকল্প বাজেটের প্রয়োজন রয়েছে। যা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন তা এই শহরকে সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন এবং পায়ে হেঁটে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী করে তুলছেন।
যে শহরটিতে হাঁটার জন্যে কোনো ফুটপাত ছিলো না, রাস্তাগুলো ছিলো খুবই সরু, সে শহরের প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কগুলোতেও এখন ফুটপাত হয়ে যাচ্ছে। একই সাথে রাস্তাও প্রশস্ত হচ্ছে। এই ফুটপাত বের করা এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজটা খুব সহজ নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে জায়গা বের করে এনে ফুটপাত এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজটা খুব দুরূহই বটে। বের করে আনা জায়গা পৌরসভারও রয়েছে, আবার ব্যক্তি মালিকানায়ও কিছু রয়েছে। ভোগদখলকারদের সাথে কথা বলে সমঝোতার মাধ্যমেই এই কঠিন কাজটি করা হচ্ছে। আর এই কঠিন কাজটি কোনো রকম হাঁকডাক ছাড়াই নীরবে করে যাচ্ছেন মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। মেয়র জুয়েল তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তা থেকে শহরকে সাজানোর পরিকল্পনায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে দলমত নির্বিশেষে পৌরবাসী মেয়রকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। ১২৫ বছরের এই শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার কাজে যেনো এই প্রথম কোনো মেয়র হাতে নিলেন।
গেটওয়ে অব আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে খ্যাত চাঁদপুর শহর দেশের প্রসিদ্ধ কয়েকটি নদী বন্দরের একটি। সড়ক, নৌ এবং রেলপথ, এই তিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চাঁদপুর শহরের উপর দিয়ে হওয়ায় এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। তিন পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পায় চাঁদপুর। মেঘনা, ডাকাতিয়ার মিঠাপানি তো আছেই। দেশের কোনো নদনদীর পানি এতোটা স্বচ্ছ এবং সুপেয় নয়, যতোটা চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়ার পানি।
শহরটির গুরুত্ব অনুযায়ী এর উন্নয়ন কিন্তু বিগতদিনে সেভাবে হয়নি। পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ বলতে গেলে তেমন একটা হয়নি। যে কারণে শহরটি একটা ঘিঞ্জি অবস্থায় পরিণত হয়েছিল। মানুষ হাঁটার কোনো ফুটপাত ছিলো না। রাস্তাগুলো খুবই সরু। শহরে দৃষ্টিনন্দন এবং নান্দনিক কিছুই ছিলো না। বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে শহরকে নান্দনিক এবং দৃষ্টিনন্দন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আর সে লক্ষ্যেই তিনি পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। বলতে গেলে একটি শহরকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার মৌলিক কাজে তিনি হাত দিয়েছেন। তিনি চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ড্রেনেজ কাজ সম্পন্ন করেছেন। শহরের এমনও এলাকা আছে যেখানে এই প্রথম পৌরসভা থেকে পয়ঃনিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সে সাথে ওইসব এলাকায় নতুন রাস্তা করা হচ্ছে এবং রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে।
মেয়র জুয়েল তাঁর পরিকল্পিত কাজের অংশ হিসেবে প্রথমে শহরের প্রধান সড়কগুলোর মোড় এবং রাস্তা প্রশস্ত করার কাজে হাত দিয়েছেন। একইসাথে ফুটপাতও নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে তিনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক পুরানো ভবন ভাঙ্গা পড়েছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশ ভাঙ্গা পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙ্গা পড়েছে। এসবই মেয়র তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, বহু মানুষের দোকানপাট এবং বাসাবাড়ির অংশবিশেষ রাস্তা এবং ফুটপাতের জন্য ভাঙ্গা পড়লেও এ নিয়ে কারোই কোনো অসন্তোষ নেই। মানুষের কল্যাণে এবং শহরকে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলার স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা তা মেনে নিয়েছেন।
ইতিমধ্যে যেসব সড়ক এবং মোড় প্রশস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনের সড়ক প্রশস্তকরণ ও ফুটপাত নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও মিশন রোড মোড় প্রশস্তকরণ, ট্রাক রোড, জোড় পুকুর পাড় এবং এ এলাকার জেএম সেনগুপ্ত রোড, তালতলা থেকে পশ্চিম দিকে শপথ চত্বর মোড় পর্যন্ত করিম পাটওয়ারী সড়ক প্রশস্ত ও ফুটপাত নির্মাণ (চলমান), হাজী মহসিন রোড প্রশস্তকরণ ও ফুটপাত নির্মাণ (চলমান)। এভাবে পর্যায়ক্রমে শহরের সকল রাস্তায় ফুটপাত করা হবে এবং রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।
মেয়র জুয়েলের আরেকটা স্বপ্ন হলো, শহরের গুরুত্বপূর্ণ দুটি লেককে একসাথ করে দিবে ছায়াবাণী এলাকায় দুই লেকের মাঝখানে সড়কের যে অংশ রয়েছে সেখানে একটা বেইলি ব্রিজ করার মাধ্যমে। অনেকটা ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে করা হবে লেক দুটাকে। যা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে শহরের নান্দনিকতা ফুটে উঠবে দৃষ্টি কাড়ার মতো।
মেয়র জুয়েলের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা হচ্ছে শহরে কমপক্ষে তিনটি বাইপাস সড়ক করা। একটি হবে চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে পূর্ব দিকে কোড়ালিয়া, মাঝি বাড়ি, বিষ্ণুদী, জিটিরোড, বিটিরোড হয়ে বাবুরহাট-মতলব রোডের সাথে সংযোগ সম্বলিত। আরেকটি হবে মুখার্জিঘাট থেকে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে সোজা পূর্ব দিকে বিআইডব্লিউটিএ মোড় পর্যন্ত। আর শহরের হার্ট পয়েন্ট খ্যাত কালীবাড়ি কোর্ট স্টেশন প্লাটফর্মের পেছনে চাঁদপুর মেডিকেল হল নামে ঔষধের দোকানের পাশ দিয়ে সোজা পূর্ব দিকে রেললাইনের দক্ষিণ পাশ হয়ে পূর্ব দিকে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত।
তাঁর আরো একটি পরিকল্পনা হলো, চাঁদপুর শহরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন যেসব পুকুর, লেক ও জলাধার রয়েছে, সেগুলোকে রিজার্ভ ওয়াটার প্ল্যান্ট হিসেবে প্রস্তুত করা। যেখান থেকে পৌরবাসী আপদকালীন সময়ে পানি ব্যবহার এবং খাবারের পানির প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। সে রকম কিছু পুকুর ও জলাধার হচ্ছে : জোড় পুকুর পাড় এলাকার পুকুর, বড় স্টেশন যেতে রাস্তার পাশে থাকা পুকুর ও শহরের দুটি লেক।
মেয়রের আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে, শহরের স্বর্ণখোলা এলাকা থেকে ময়লার ডাম্পিং স্টেশনটি সরিয়ে ফেলে এটিকে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া। একইসাথে পৌর বাস টার্মিনালটি এখান থেকে সরিয়ে বাবুরহাটের পর নেয়া হবে। তাঁর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শহরের যানজট নিরসন হবে, শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াতে একমাত্র পথ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে একটা পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে চাঁদপুর শহর পরিগণিত হবে। বাস্তবিকই তখন শহরটিকে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন হিসেবে দেখা যাবে। এসব সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ।

 

সর্বাধিক পঠিত