কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা, হিম বাতাসে জনজীবন স্থবির

কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা আর শীতের প্রকোপ বেড়েই চলছে। দিনের বেলা হিম বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র ঠান্ডায় কাজকর্মে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। ফলে কাজের ফাঁকে শুকনো খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ১০০।
চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের কৃষক বাদশা মিয়া (৫০) বলেন, ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় কৃষি কাজ করতে পারছি না। বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তায় আছি শীত আর ঠান্ডা থাকলে বোরো আবাদের ক্ষতি হবে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, বোরো আবাদের জন্য বীজতলার চারার পরিণত বয়স হয়েছে। কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে জমিতে চারারোপন করতে পারছি না। এদিকে বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিশেষ করে এই শীতে দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ চরম কষ্টে রয়েছে। শীত যত বাড়ছে, ততই অসহায় হয়ে পড়ছে কুড়িগ্রামের চরবাসী। এই মুহূর্তে শীতার্তদের মধ্যে দ্রুত শীতবস্ত্র সহায়তার প্রয়োজন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। এর মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বসবাস করেন। ইউনিয়নে প্রায় ২০টি চর রয়েছে, যেখানে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ শীতের চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারি সহায়তা হিসেবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১শতটি কম্বল পেয়েছি, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। শীতার্ত মানুষদের নিয়ে আমি মহাবিপাকে পড়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, আপাতত শীত ও ঠান্ডায় কোন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে বোরো বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি যাতে বীজতলার কোনো ক্ষতি না হয়।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, বৃহস্পতিবার জেলায় সকাল ৬টায় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এবং বাতাসের আর্দ্রতা ১০০। আগামী দুই থেকে তিনদিন এমন তাপমাত্রা অব্যহত থাকবে। তবে মাসের শেষে একটি শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

