• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা সেবার অবস্থা নাজুক!

প্রকাশ:  ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ডাক্তার স্বল্পতার কারণে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। এক সময়ে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ছিলেন ৩৭ জন। আর এখন কার্যত ৩জন ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এতে ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছেন। এতে করে সাধারণ রোগীর দুর্ভোগ বেড়েছে চরম আকারে।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জের স্বাস্থ্য সেবা খাতে প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ হাসপাতালে নেই গাইনী বিভাগের কোনো মহিলা ডাক্তার ও কনসালটেন্ট। ডাক্তার কেউ আছেন ছুটিতে, আবার কেউ আছেন প্রেষণে অন্যত্র কিংবা ছুটি ছাড়াই রয়েছেন অনুপস্থিত।
প্রায় ৫ লাখ জনসাধারণ অধ্যুষিত এ উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে কার্যত ডাক্তার আছেন ডেন্টাল ও হোমিও ডাক্তার মিলে মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে ডেন্টাল ও হোমিও ডাক্তার ছাড়া বাকী তিন জনকেই ঘুরে ফিরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। বর্তমানে ক’জন ডাক্তারের কর্মস্থল ফরিদগঞ্জে থাকলেও এখন প্রেষণে অন্যত্র তারা দায়িত্ব পালন করছেন। আবার কেউ আছেন ছুটিতে কিংবা রয়েছেন হাসপাতালে অনুপস্থিত। এ যেনো গোয়ালের গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই-এর মতো অবস্থা। অফিস সহকারী দুলাল জানান, এ হাসপাতালেই এক সময় ডাক্তার কর্মরত ছিলেন ৩৭ জন।
অপরদিকে উপজেলায় ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২টি কেন্দ্রে ডাক্তার থাকলেও কর্তৃপক্ষের ডাকে সাড়া দিতে তারা আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরই দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদগঞ্জের স্বাস্থ্য সেবার কার্যত নাজুক অবস্থা নিয়ে সর্বত্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঘনবসতিপুর্ণ  ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নে লোকসংখ্যা ৫ লাখেরও বেশী। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিরাগত রোগীর সংখ্যা থাকে ৩ শতাধিক। গত মার্চ মাসে এই হাসপাতালে বহিরাগত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭শ’ ১৮ জন। আবার এ মাসেই রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১শ’ ১১ জন।
চিকিৎসা সেবা দিতে এ উপজেলায় ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার রয়েছে। বাকী ১৩ টিতে দীর্ঘ দিন থেকে কোনো ডাক্তার নেই। যে কারণে প্রতিদিনই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বহিরাগত রোগীর সংখ্যা ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছেই। অথচ এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২জন ডাক্তারের স্থলে বর্তমানে আছেন ডেন্টাল ও হোমিও ডাক্তার মিলে মাত্র ৫ জন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার তাদের রোগীদের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী রোগীরা জানান, এখন এ হাসপাতালে এসে ডাক্তারের জন্যে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে বেগ পেতে হয়। আগে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ডাঃ মৌসুমী আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা থাকলেও মূলত তিনি প্রেষণে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ডাঃ শোভন দাসও প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে, ডাঃ সৈয়দা সাবরিনা ছিদ্দিকা প্রেষণে আছেন বর্তমানে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে, ডাঃ নাদিয়া ফেরদৌস গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো ছুটি না নিয়েই অনুপস্থিত। ডাঃ মাহমুদা বেগম গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। ডাঃ ইমতিয়াজ দোলনকে কড়ইতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের ডাকে ডাঃ দোলনকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ইমার্জেন্সী ডিউটি পালন করতে হচ্ছে। ডাঃ কামরুল হাছানকে বদলি করা হয়েছে হাইমচর উপজেলায়।
একটি সূত্র পরিসংখ্যান দিয়ে জানায়, ফরিদগঞ্জে স্বাস্থ্য খাতে প্রতিমাসে সরকরের ব্যয় হয় প্রায় অর্ধকোটি  টাকা। অথচ এখন ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা সেবা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।
উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আছাদুজ্জামান জুয়েল গতকাল ৬ এপ্রিল শনিবার এ প্রতিনিধিকে বলেন, এখানে গড়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। বর্তমানে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে রোগীদের মাঝে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে যত কষ্টই হোক, কোনো রোগীই যেনো চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকিতে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম শিপন স্বল্প সংখ্যক ডাক্তারের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। হয়তো সহসাই জনস্বার্থে ডাক্তার সংকটের বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে তিনি আশ^স্ত করছেন।

 

সর্বাধিক পঠিত