• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যেভাবে ফেসবুক হ্যাক করে হচ্ছে চাঁদাবাজি

প্রকাশ:  ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ০১:২৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

‘দোস্ত, একটু হেল্প লাগবে। জরুরি। আমার ১৪ হাজার টাকা দরকার এক্ষুণি। পাঠাতে পারবি?’ হঠাৎ বন্ধু সামসুল আরিফিন বনির এরকম মেসেজ ফেসবুকের ইনবক্সে। বনি একটি ওষুধ কোম্পানির পরিচালক। নিশ্চয়ই বিশেষ প্রয়োজনে টাকা দরকার হয়েছে তার। আশেপাশে হয়তো কোনো ব্যাংকের বুথও নেই। সাত-পাঁচ না ভেবেই টাকা পাঠান বনির দেয়া বিকাশ নম্বরে। একইভাবে বনি টাকা খুঁজেছে আরেক বন্ধু রাজীব আল মাসুদের কাছে। রাজীব লিখেছেন, ‘ঠিক আছে নিয়ে যা’। প্রতিউত্তরে বনি লিখেছেন, ‘দূরে আছি। বিকাশ কর।’ বিকাশ করে বনিকে টাকা পাঠান রাজীব। পরে  ফোনে কথা হয় বনির সঙ্গে। বনি চমকে উঠেন। তিনি কারও কাছে টাকা চাননি। টাকা পানওনি। ততক্ষণে বুঝতে বাকি নেই বনির আইডি হ্যাক করে হ্যাকারই ঘটাচ্ছে এই কাণ্ড! ততক্ষণে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বনির বন্ধুদের কাছ থেকে। অবশেষে সেই হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ এই হ্যাকার মনসুর ইবনে কামাল। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া করছে। দীর্ঘদিন থেকেই এই জ্ঞানকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মানুষের কাছ থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশি-বিদেশি একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত মনসুর। এ বিষয়ে তদন্ত করছেন কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা।

ঘটনাটি ঘটে ২০শে সেপ্টেম্বর। ওই দিন সকালে ফেসবুক লগ ইন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন সামসুল আরিফিন বনি। এর মধ্যেই বন্ধু সালাহউদ্দিন, মফিকুল, ডা. পাশাসহ অনেকে ফোনে জানতে চান টাকা পাঠাবেন কি-না। একই সময়ে তার বন্ধু রাজীব আল মাসুদ ফোনে জানান, তিনি বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। একইভাবে টাকা পাঠিয়েছেন শাহরিয়ারসহ বনির অনেক বন্ধু-স্বজন। ২৩শে সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন সামসুল আরিফিন বনি। 

বিকাশ নম্বরের সূত্রধরে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলিমুজ্জামানের নির্দেশনায় তদন্তে নামেন এই ইউনিটের সদস্যরা। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ২৮শে সেপ্টেম্বর পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বারিধারা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মনসুর ইবনে কামালকে। তার কাছে তখন পাঁচটি মোবাইলের সিম পাওয়া যায়। প্রতিটিতে বিকাশ অ্যাকাউন্ট করা। পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, টার্গেটকৃত ব্যক্তির ফেসবুকের ইনবক্সে ও কমেন্টে ম্যালওয়ার ব্যবহার করে মনসুর। এতে ক্লিক করলেই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চলে যায় তার কাছে। এভাবেই ফেসবুক হ্যাক করতো মনসুর। দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক হ্যাক করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আদায় করছিল সে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মনসুরের সঙ্গে কোনো চক্রের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর একদিনের রিমান্ডে মনসুর স্বীকার করেছে, হ্যাক করার জন্য সে নিজেই ম্যালওয়ার তৈরি করতো। হ্যাক করে সহজেই লাখ-লাখ টাকা আয় করা যায় বলে এতে ঝুঁকে যায় কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই ছাত্র। গ্রেপ্তারকৃত মনসুর ইবনে কামালের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার ঘাকুরা গ্রামে।

সূত্রমতে, প্রায়ই ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আর্থিক প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পুলিশমুখো হন না। একইভাবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর আইডি হ্যাক করে তার স্বজনদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হচ্ছিলো। এ বিষয়ে গুলশান থানায় জিডি করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। জিডি করার বিষয়টি জানাজানি হলে তার আইডিটি ফেরত পান তিনি। গত আগস্টে হ্যাক করা হয়েছিল লাক্স তারকা মেহজাবিনের ফেসবুক আইডি। ওই হ্যাকারকেও গ্রেপ্তার করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গত জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক পুলিশ কনস্টেবলের ফেসবুক হ্যাক করে তার পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে অর্ধলাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফেসবুক হ্যাক করার পর আইডির প্রকৃত মালিকের কাছে টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিলে ফেরত দেয়া হয় আইডি। প্রতিদিনই এরকম অভিযোগ আসছে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, নানাভাবে সাইবার অপরাধ হচ্ছে। ফেসবুক হ্যাক করে টাকা আদায়ের ঘটনাও এর মধ্যে অন্যতম। আমরা প্রতিটি অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফেসবুকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো লিঙ্কে জেনে-বুঝে ক্লিক করতে হবে। সচেতন হলে অনেক সাইবার অপরাধই কমে যাবে বলে মনে করেন ডিসি আলিমুজ্জামান।

সর্বাধিক পঠিত