• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনা সন্দেহে নিজ বাড়িতেই জায়গা হলো না বৃদ্ধের

আশ্রয় হলো চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে

প্রকাশ:  ১৮ এপ্রিল ২০২০, ২০:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

করোনা সন্দেহে নিজ বাড়িতে জায়গা হলো না ৬০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধের। নিজের বসত বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে ওই বৃদ্ধ আশ্রয় চেয়েছিলেন তার মেয়ের বাড়িতে। কিন্তু ওই এলাকার মানুষ সেখানেও থাকতে দেয়নি তাকে।
স্থানীয় একটি ঈদগা মাঠে ফেলে রাখা হয় ওই বৃদ্ধকে। অবশেষে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়তায় বর্তমানে তার ঠাঁই হয়েছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে করোনা সংক্রমণের তেমন কোনো লক্ষণ নেই ওই বৃদ্ধের শরীরে। এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে মতলব উত্তর উপজেলায়।
জানা যায়, মজিবুর রহমান নামের ওই বৃদ্ধ ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে তিনি জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হন। অসুস্থ থাকায় তাকে কারখানা থেকে ছুটি দেয়া হয়। কর্মস্থল ছেড়ে গতকাল শনিবার সকালে তিনি চলে আসেন তার নিজ বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোপালকান্দি গ্রামে। তার স্ত্রী জীবিত নেই, নেই কোনো ছেলে সন্তান। নিজ বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তার শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু করোনা কবলিত ঢাকা থেকে এসেছেন এবং জ্বর, কাশি থাকায় বাড়ির লোকজন তাকে নিজ ঘরে থাকতে বাধা দেয়। বহু আকুতি-মিনতি করেও পৈত্রিক ভিটেবাড়িতে থাকার সুযোগ হয়নি তার।
নিরূপায় হয়ে মজিবুর রহমান চলে যান তার একমাত্র মেয়ের শ^শুর বাড়ি একই ইউনিয়নের মুক্তিরকান্দি গ্রামে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে সেখানেও ঠাঁই হয়নি তার। এলাকার মানুষ তাকে মেয়ের বাড়িতে থাকতে দেয়নি। মুক্তিরকান্দি গ্রামের লোকজন তাকে স্থানীয় হাজী মার্কেটের পাশের একটি ঈদগাহে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুশরাত জাহান মিথেনকে বিষয়টি জানান।
ডাঃ নুশরাত জাহান মিথেন বিষয়টি তাৎক্ষণিক চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ সাখাওয়াত উল্লাহকে জানালে তাঁর নির্দেশে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে বৃদ্ধকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, বৃদ্ধের জ্বর, কাশি তেমন গুরুতর নয়, করোনায় আক্রান্তের উপসর্গও তেমন নেই। তারপরও যেহেতু তিনি করোনা কবলিত এলাকা থেকে এসেছেন সে জন্যে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। রোববার সকালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো রোগী মারা গেলে অনেক ক্ষেত্রে স্বজনরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে কসাই আর হাসপাতালকে কসাইখানা বলে মন্তব্য করে থাকেন। সরকারি হাসপাতাল হলে তো অভিযোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। করোনা সেই চিরচেনা প্রথা পাল্টে দিয়েছে। করোনা সন্দেহে মজিবুর রহমান নিজ বাড়ি ও একমাত্র সন্তানের বাড়ি থেকে বিতাড়িত। স্বজনদের মায়া-মমতা, সেবা-যতœ, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন রাস্তার আবর্জনায়। ঠিক সেই সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবতাবাদী চিকিৎসক ও সরকারি চিকিৎসালয়। যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি আহারও জুটবে তার! করোনার সংক্রমণ না হলে এমন করুণ বাস্তবতা হয়তো অনেকের অজানাই থেকে যেত। এ যেন স্বজন, প্রিয়জন ও মানুষ চেনার এক কঠিন সময়।

 

সর্বাধিক পঠিত