• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জাটকা রক্ষা অভিযান : চালের সাথে কিছু আর্থিক অনুদান চায় জেলেরা

প্রকাশ:  ০২ মার্চ ২০২২, ১০:৩৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুরের ৪ উপজেলার জেলেরা জালসহ জেলে নৌকাগুলো নদী কিনারার ডাঙ্গায় তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেননা মঙ্গলবার ১ মার্চ থেকেই শুরু হয়েছে জাটকা ইলিশ মাছ রক্ষার অভিযান। যা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এই দুইমাস চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, জাটকা রক্ষা অভিযান সফল করতে এবং অসাধু জেলেদের রুখতে স্থানীয় প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও মৎস্য বিভাগ দফায় দফায় মিটিং করেছে। পদ্মা-মেঘনায় অভিযান করতে তারা ইতিমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণের নদী পাড় মিলিয়ে আমাদের ৪ উপজেলায় ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা তাদের চাল দিতে পারবো। জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বরাদ্দ দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ডিও দেয়া হয়েছে। গেলো বছর অভিযানে ৩শ’-এর মতো মামলা ছিলো এবং ৩শ’ ১০ জন জেলেকে আমরা সাজা দিয়েছি। এবার আরও কঠোরভাবে আমরা দুষ্ট জেলেদের নিবৃত্ত করবো। জাটকাকে পরিপূর্ণ ইলিশে রূপান্তর করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে নদীতে সবদিক নৌপুলিশের নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়ে নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, চাঁদপুর অঞ্চলে আমাদের নৌ পুলিশের ১২টি স্টেশন রয়েছে এবং ১শ’ ৭৫ জনের মতো পুলিশ সদস্য এতে কর্মরত রয়েছেন। আমরা সব মিলিয়ে ২৪টা টিম দিনে-রাতে কাজ করার ডিউটি বন্টন করেছি। এছাড়াও হেডকোয়ার্টারে আমরা এই অভিযানকে সফল করতে আরও জনবল চেয়েছি এবং আশা রাখছি আরও অধিক সংখ্যক জনবল পাবো। এর সাথে আমাদের লজিস্টিক সাপোর্টও বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি অভিযানের কর্মকৌশল প্রসঙ্গে আরও বলেন, এই ২ মাস আমরা চিহ্নিত কিছু খালের মুখ ইউপি চেয়ারম্যানদের তত্ত্বাবধানে বন্ধ রাখবো। যাতে জেলেরা খাল থেকে নৌকা নিয়ে বের হতে না পারে। তাছাড়া এ সময়ে নদীতে কোনো প্রকার স্পীডবোট চলবে না। আমরা কিছু স্পীডবোট রিক্যুজিশন করে নিবো কাজের জন্যে এবং বাকি সব বন্ধ থাকবে। সেই সাথে বলতে চাই, নদীতে জেলেদের স্পীডবোট দিয়ে মাছ ধরার সাথে কোন নৌ পুলিশের সংশ্লিষ্টতা বা কর্তব্য পালনে ব্যত্যয় পাওয়া গেলে সাথে সাথে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে অভিযান প্রসঙ্গে চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের ইলিশ জেলে বাসু রাঢ়ি (৪২) বলেন, আমার পরিবারের লোকসংখ্যা ৮ জন। ৪০ কেজি চাল দিলেই কি সংসার চলবে? এর সাথে খেতে তেল, নুন ও শাকসবজিও লাগে। তাই সরকার যদি নিষেধাজ্ঞার সময় চালের সাথে কিছু আর্থিক অনুদানও দিতো তাহলে উপকার হতো।
একই এলাকার জেলে সাদ্দাম ছৈয়াল (৩২) বলেন, সরকারি আইন মেনে আমাদের এখানকার জেলেরা নৌকা ইতিমধ্যে উপরে তুলে ফেলেছে। কিন্তু মোহনপুর এলাকার বহু জেলে জাটকা ধরার জন্য আমাদের এদিক দিয়ে যায়। মোহনপুরের জেলেরাই জাটকা বেশি ধরে।
পাকিস্তান আমল থেকে নদীতে মাছ ধরেন রণাগোয়াল এলাকার আব্দুর জব্বার হাওলাদার। তিনি বলেন, জাটকা চাঁদপুরের জেলেরা নয় বরং পাশের জেলা শরীয়তপুরের জেলেরা এখানে এসে ধরে। তারা চাঁদপুরের জেলেদের বদনাম করছে। এই নিষেধাজ্ঞার সময় ৪০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাই না। আমাদের ৩৫/৩৬ কেজির বেশি চাল দেয় না। এমনকি প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দোকানদার, রিকশাচালকরাও জেলে কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন বলে ক্ষুব্ধ তিনি।
বহরিয়ার জেলে রকমান বেপারী (৫৫) বলেন, ঋণের কিস্তি কি বন্ধ থাকবো? সরকার যদি এই সময় কিস্তি নেয়া লোকদের বলে দেয় কিস্তি না নিতে, তাহলে আমরা একটু স্বস্তি পেতাম।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের বিভিন্ন মৎস্য আড়তের লোকজন জানান, প্রকৃত ইলিশ জেলেরা জাটকা ধরার জন্যে নদীতে যায় না। একশ্রেণীর লোভী জেলে আছে যারা রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলেদের নদীতে নামায় এবং জাটকা নিধন ও বিক্রি করছে চুরি করে। মতলব, আনন্দবাজার, রাজরাজেশ^র, হাইমচরেরর চর এলাকা, যমুনা রোড, পুরাণবাজার রনাগোয়াল, বহরিয়া, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর, গোবিন্দা, আখনেরহাট এসব এলাকা জাটকার স্পট। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে জাটকা রক্ষা করতেই হবে, তা না হলে ইলিশের উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অভয়াশ্রমের এই সময়ে কার্ডধারী জেলেদের জনপ্রতি ২ মাস হারে ৪০ কেজি করে মোট ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনিয়ম রোধে ট্যাগ অফিসারদের উপস্থিতিতে এই চাল জেলেদের মাঝে বিতরণ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টা আমরা নদীতে অভিযানে থাকবো। ঋণ কালেকশনকারীদের বলে দিবো, যাতে এই ২ মাসে ঋণের কিস্তি কালেকশন না করে স্থগিত রাখে। আমি অভিযান সফল করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

সর্বাধিক পঠিত