• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা বিএনপির নির্বাচন লেজেগোবরে

প্রকাশ:  ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১২:৫২ | আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১২:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দ্বিধা-বিভক্তির ভোটে সভাপতি শেখ মানিক ও ইঞ্জিঃ মমিন এবং সেক্রেটারী অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ ও মোস্তফা খান সফরি
 দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পরে চাঁদপুর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন এক নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেছিল দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। নতুন নেতৃত্ব আসলেও সেটি একাধিক সভাপতি ও একাধিক সেক্রেটারীর নেতৃত্ব। তাই দলে ভাঙ্গন এবং দ্বিধা-বিভক্তি রয়েই গেলো। ঐক্যবদ্ধ জেলা বিএনপির দেখা আর পেলো না দলের নেতা-কর্মীরা। সম্মেলনকে ঘিরে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচন হলেও এ নির্বাচন হয়েছে দ্বিধা-বিভক্তির নির্বাচন। এক নির্বাচন কমিশনের অধীনে এক জায়গায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ভোট হয়েছে চার জায়গায়। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন বাগাদী ইউনিয়নস্থ নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর এই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গ্রুপ ভিন্নভাবে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে। এই বিদ্রোহী গ্রুপ জেলার আট উপজেলা ও সাত পৌর কমিটিসহ সকল ইউনিটের কাউন্সিলরদের ভোট নিয়েছে চাঁদপুর শহর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে। দুই গ্রুপের আলাদা আলাদা ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে দুইজন দুইজন চারজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাঁদের অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের নির্বাচিত ঘোষণা দিয়ে যান।
উভয় গ্রুপের ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণায় যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় তারা হচ্ছেন- নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভোটে সভাপতি পদে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম নির্বাচিত হন। এখানে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক পেয়েছেন ৯২৭ ভোট, আর সলিম উল্যাহ সেলিম পেয়েছেন ৮৯২ ভোট।
অপরদিকে বিদ্রোহী গ্রুপের ভোট অনুষ্ঠিত হয় তিন জায়গায়। সেগুলো হলো- হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও পৌর ইউনিটের ভোট হয়েছে হাজীগঞ্জের সোনাইমুড়ীতে। শাহরাস্তি ও কচুয়ার চার ইউনিটের ভোট হয়েছে শাহরাস্তিতে এবং চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচরের পাঁচ ইউনিটের ভোট হয়েছে চাঁদপুর শহরে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহিনের গুয়াখোলাস্থ বাসভবনে। এই তিন জায়গার ভোট গণনা শেষে হাজীগঞ্জে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে যে, সভাপতি পদে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক পেয়েছেন ৭১১ ভোট, এসএম কামাল উদ্দিন পেয়েছেন ৮২ ভোট এবং শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক পেয়েছেন ১১ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক পদে মোস্তফা খান সফরি পেয়েছেন ৬৫৮ ভোট, কাজী গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন ১০৪ ভোট, দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান পেয়েছেন ৪১ ভোট, আর অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম পেয়েছেন মাত্র ১ ভোট। এই গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ও মোস্তফা খান সফরি।
এদিকে নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও নির্বাচনে শুধু শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক এবং অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম ব্যতীত অন্য প্রার্থীদের এমনকি তাদের কর্মী-সমর্থক ও তাদের অনুসারী ভোটারদের কাউকে যোগ দিতে বা নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা যায় নি। এরপরও কেন্দ্রীয় টিম এখানকার ভোটে বিজয়ীদের নির্বাচিত ঘোষণা করে যান।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও চাঁদপুর শহরে অনুষ্ঠিত পৃথক নির্বাচনকে অবৈধ বলে জানান নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডঃ সামছুল ইসলাম মন্টু বলেন, সেটি অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আমরা দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গোপন ব্যালটের মাধ্যমে আগামীর নেতৃত্ব ভোটাররাই নির্বাচন করবে এ প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো প্রার্থীর কোনো বক্তব্য থাকলে এখানে এসে বলতে পারে। কিন্তু দূর থেকে কোনো কথা বলে বা অভিযোগ দেয়ার কোনো মানে হয় না।
একক আধিপত্য ও শুধুমাত্র দুজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক না। আমি সকল বুথের ভেতর ঘুরে ঘুরে ভোট প্রদান দেখছি। আমার দেখা মতে এমন অনিয়ম চোখে পড়ে নি।
সব মিলিয়ে চাঁদপুর জেলা বিএনপির নির্বাচন লেজেগোবরে অবস্থায়। এর দ্বারা দলের ভেতরে দ্বিধা-বিভক্তি এবং সঙ্কট আরো ঘণীভূত হলো বলে মনে করেন দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

 

সর্বাধিক পঠিত