• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কচুয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ , পুলিশসহ আহত ২০

প্রকাশ:  ০২ আগস্ট ২০২২, ১৩:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কচুয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে  কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা এ সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষ দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের নেতা-কর্মী কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। সংঘর্ষে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বেশ কিছু দোকানপাট ভাংচুর হয়।
এদিকে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিলে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য কার্তিক রায় ও ছাত্রলীগ নেতা সজিব হোসেনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
গতকাল সোমবার ছিল কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন এবং তাঁরা উপস্থিতও ছিলেন। বর্ধিত সভাকে উপলক্ষ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন কয়েকজন। মূলত তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই তাদের সমর্থকরা পরস্পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এদের একটি অংশ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অনুসারী, অপর অংশ ড. সেলিম মাহমুদের অনুসারী। সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা ব্যবহার করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র থেকে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুরকে কেন্দ্র করে। আর ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন ড. সেলিম মাহমুদের অনুসারী। তাঁর সমর্থকরা অভিযোগ করেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অনুসারীরা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের অফিস ভাংচুর করেছে। এ ঘটনার পরই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে আহত ছাড়াও বেশ কিছু দোকানপাট ভাংচুর করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কজন নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অনুসারী গাজী ফারুক ও গাজী কামালের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস ভাংচুর করা হয়। হামলাকারীরা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিসের টিভি, সিসিটিভি ও চেয়ার টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এছাড়া অফিসের সামনে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। তারা ট্রমা হাসপাতালের সার্টার ভাংচুর এবং হাসপাতালের জিএম সিফাতের উপরও হামলা চালায়।
অপরদিকে প্রতিপক্ষ অভিযোগ করেন, সংঘর্ষ চলাকালে কচুয়া বিশ^রোড এলাকায় অবস্থিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বাদলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সৌদিয়া হোটেল ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এছাড়া কচুয়া মডার্ন হাসপাতাল, সিপনের সেলুন, নজরুলের ভাই ভাই প্লাস্টিক হাউজ ও সুধিরের দোকান ভাংচুর করা হয়।
সংঘর্ষে উল্লেখযোগ্য আরো যারা আহতরা হয়েছেন তারা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন, নাজমুল, যুবলীগ নেতা মানিক, নাসিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন সবুজ, আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম, তোফায়েল, কাউছার ও সাগর। এঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইবনে আল জায়েদ হোসেন, সিনিয়র এএসপি (কচুয়া সার্কেল) আবুল কালাম চৌধুরী ও কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালান।
দুপুরের পর সংঘর্ষ থেমে গেলেও পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। যে কোনো সময় উভয় পক্ষে আবারো সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।