• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ড্রাগনে নতুন স্বপের হাতছানি

প্রকাশ:  ২০ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। নিজেও ডিগ্রি পাস করে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য গ্রামে থেকে পরিবারের সম্পত্তি দেখভালের পাশাপাশি চাষাবাদ করে সফলতা অর্জন করা। সেই লক্ষ্যে মাছ চাষ, গরুর ফার্ম, মুরগির খামার করেন তিনি। কিন্তু প্রত্যাশিত সফলতা অর্জন করতে পারেন নি। পরে নিকটাত্মীয়ের বাড়ির ছাদে লাগানো ড্রাগন ফল দেখে তার আগ্রহ জন্মে। তার কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু চারা নিয়ে এসে নিজের ক্ষেতে শুরু করেন ড্রাগন ফলের আবাদ। সেই শুরু। গত দুবছরে নিজের পরিশ্রমের সফল রূপ দেখছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনয়নের লোহাগড় গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন মিঠু।
বর্তমানে তার বাগানের প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে বেশ কয়েক ধরনের ড্রাগন ফল। রোগ-বালাই কম হওয়ার পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বিদেশী এ ফল চাষে এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করছে আশপাশের চাষিরা। অনেকেই জানতে চাইছেন, কিভাবে অল্প সময়ে ফলন আনতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
সরেজমিন লোহাগড় গ্রামের চাষী মিঠুর ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে ড্রাগন ফল কাটছেন চাষী মিঠুসহ তার কর্মচারীরা। ফলের বাগানের পরিচর্যা করতে করতে মিঠু জানান, গত দুই বছর কষ্ট করে ড্রাগন গাছগুলোর যত্ন করেছি। ইতিমধ্যেই ফল পেতে শুরু করেছি। এখন প্রতিমাসে অন্তত দুবার ফল কেটে বাজারে পাঠাচ্ছি। ক্রমেই বাড়ছে এর চাহিদা। ফলে এ বছর নতুন করে বাগানের পরিধি বাড়িয়েছি। কয়েকদিন পূর্বে বাগানের পাশের জমি কিনেছি। স্বপ্ন দেখছি ড্রাগন ফলের বিশাল বাগান করার। এখনই লাভের কথা ভাবছি না, কারণ অন্তত ২০/২৫ বছর ধরে এই গাছে ফলন পাবো। এছাড়া এ বছর থেকে কৃষকদের আগ্রহ দেখে চারা করার কাজও শুরু করেছি।
তিনি আরো জানান, ইউটিউবের ভিডিও দেখে ৭০ শতক জমিতে বেড তৈরি করে ৭০০ ড্রাগন চারা রোপণ করেন। বেড তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও গাছের পরিচর্যায় এ পর্যন্ত তার প্রায় ৭ লাখ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটা গাছে ড্রাগন ফল ধরেছে। পর্যায়ক্রমে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করছেন তিনি। পাইকারী ও খুচরা ফল বিক্রি করে তিনি এখন সফল কৃষক।
ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে আসা আবুল কাশেন বলেন, এখানে যে ড্রাগনের ফলন হয়েছে, বেকার যুবকদের এ চাষাবাদের ওপর প্রশিক্ষণ ও সহায়তা করা গেলে তাদের ভাগ্য বদলের ব্যাপক সম্ভাবনা আশা করা যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাতুল ইমরান বলেন, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি মিনারেল রয়েছে। একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত শক্তি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকর।
আরেক উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, মিঠুর মতো চাষীদের কারণে এটি দেশীয় ফল হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ফলের দোকানগুলোতে এখন দেশী ফলের মতোই মিলছে ড্রাগন ফল। কৃষি বিভাগ সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছে।
তিনি আরো জানান, ড্রাগন ফলের আবাদকে আরো সমৃদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সোলার সিস্টেম ডিপ টিউবওয়েল দেয়ার চেষ্টা করবো। যাতে গাছগুলোতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত হয়। এছাড়া ড্রাগন ফলের চার পাশে সাথী ফসল হিসেবে মরিচের আবাদ করার জন্যে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সকল ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। আমরা চাই বিদেশ থেকে ফলের আমদানি নিরুৎসাহিত করে বিদেশী ফলের দেশে আবাদ বাড়াতে।

 

সর্বাধিক পঠিত