• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সংস্কারের অভাবে বিলীন হচ্ছে কড়ৈতলীর জমিদার বাড়ি

প্রকাশ:  ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

জমিদার আর জমিদারি না থাকলেও দাঁড়িয়ে আছে তাদের রেখে যাওয়া প্রাচীন স্থাপনাসমূহ। এক সময় তাদের অত্যাচারে এবং হাঁক-ডাকে এলাকার মানুষ চুপিসারে চলাফেরা করলেও এখন তাদের আত্মীয়-স্বজন বা দূর সম্পর্কের কেউ এ এলাকায় নেই। বলছিলাম ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের কড়ৈতলী নামক গ্রামের জমিদার বাড়ি বা বাবুর বাড়ির কথা। নামে জমিদার বাড়ি হলেও এখন এই বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কড়ৈতলীর এই জমিদার বাড়িটি এলাকার সকলের কাছে বাবুর বাড়ি নামে পরিচিত। জমিদার বাড়িটি ঘিরে রয়েছে কয়েকশ’ বছরের ইতিহাস। চাঁদপুর শহর থেকে এই বাড়িটি ২৫ কিঃ মিঃ এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর হতে ৫ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। জমিদার বাড়িটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেই জমিদারদের পাইক পেয়াদা এবং তাদের বংশের বা দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে কেউ। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত হাতী-ঘোড়ারও নেই কোনো আলামত। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু তাদের দুর্গা মন্দির, আছে জরাজীর্ণ লতা-পাতায় মোড়ানো বিধ্বস্ত প্রাসাদোপম অট্টালিকা। রয়েছে কাচারী ঘর ও সুড়ঙ্গ পথ।
জানা যায়, ১২২০ সালের দিকে স্থানীয় হরিশ চন্দ্র বসুর হাত ধরে জমিদারদের কড়ৈতলীতে আগমন ঘটে এবং ১৯৪৩ সালের দিকে তাদের শেষ জমিদার গোবিন্দ চন্দ্র বসুর হাত ধরে এই জমিদার পরিবারের সমাপ্তি ঘটে।
চারশ’ একর সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত জমিদার বাড়িটির অস্তিত্ব এখন সামান্য জায়গা নিয়ে বিরাজ করছে। প্রশাসনিকভাবে দেখভালের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য জায়গার ওপর যা কিছু আছে তাও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। এলাকার বিভিন্ন জনের মুখে শোনা যায়, তৎকালীন সময়ে অন্যান্য জমিদারের মতো এই জমিদারেরাও ছিলেন অত্যাচারী ও হিংস্র স্বভাবের। তাদের ভয়ে এলাকার কোনো ব্যক্তি জুতা পায়ে, ছাতা মেলে অথবা আওয়াজ করে চলাফেরা করতে পারতো না।
এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ কড়ৈতলীর এই জমিদার বাড়িটি দেখতে আসেন। তবে ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং পবিত্র ঈদ ও হিন্দুদের পূজার বন্ধের সময় জমিদারদের এই নিদর্শনটি দেখতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
জমিদারদের এই নিদর্শনের কাছে গেলে দেখা হয় জনৈক যুবকের সাথে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে এখানে অনেক পর্যটক আসেন। কিন্তু অযত্ন-অবহেলার কারণে এখানকার এই জমিদারি স্থাপনাগুলো বিলীন হওয়ার পথে। পশ্চিম পাশের ভবনটির উপরে আমি কয়েকবার বিষধর সাপ দেখেছিলাম। স্থাপনাগুলো সংস্কার করলে পর্যটকদের ভিড় আরো বেড়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন বলেন, তৎকালীন সময়ে কড়ইতলীর এই জমিদারদের ৪শ’ একর সম্পত্তির মধ্যে কেউ কোনো সম্পত্তি বেচা-বিক্রি করে না গেলেও বর্তমানে সেসব সম্পত্তি এলাকার অনেকে নামে-বেনামে নিজেদের করে নিয়েছেন। স্থাপনাগুলোর মাঝখানে মণি মুক্তা ও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস পাওয়ার লোভে বিশাল বিশাল গর্ত করা হয়েছে। যে কারণে এই স্থাপনাগুলো যেকোনো সময় হেলে পড়ে যেতে পারে।
এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই এলাকায় আমার জন্ম। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি জমিদারদের এই স্থাপনাগুলো। স্থাপনাগুলো দেখতে বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকদের দল আসে। বিশেষ করে ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং সরকারি বড় বড় বন্ধগুলোর সময় এখানে অনেক পর্যটক ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। তিনি বলেন, স্থাপনাগুলো একেবারেই অযত্নে-অবহেলায় ঘিঞ্জি অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি এবং এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের হস্তক্ষেপে হয়তো কড়ৈতলীর এই জমিদার বাড়িটিও হতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এর রক্ষণাবেক্ষণের ফলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে তৎকালীন জমিদারদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বিষয়টি নিয়ে আমরাও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সর্বাধিক পঠিত