• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প চূড়ান্তভাবে বন্ধের আশঙ্কা

প্রকাশ:  ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুুুর জেলার ৬ উপজেলার আবাদযোগ্য জমিতে সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তোলা হয় চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। এটি এখন দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্পের অন্যতম। যার অধীনে ৫৩ হাজার হেক্টর এলাকার  ২৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পের সেচ পাম্পগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রায় দুুই যুুগ আগে। জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব সেচ পাম্প। চার যুগ হলেও প্রকল্পের ১২০০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন চরবাগাদী পাম্পিং প্ল্যান্টের পাম্প মেশিনগুলো প্রতিস্থাপন হয়নি। প্রতি বছরই সংস্কার হলেও কর্মক্ষমতা অনেক কমে গেছে। সেচ মৌসুমে চাহিদার আলোকে পাম্পগুলো পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নানুপুর স্লুইচ গেটের পাম্প মেশিনের হঠাৎ ত্রুটির মেরামতের জন্যে বাইরের তিনজন মেকানিক দিয়ে কাজ করাতে গেলে তারা বিদ্যুতায়িত হন। এর মধ্যে দুজন অসহায় মেকানিক হাসপাতালে মারা যান। যাদের অসহায় পরিবার আজো কোনো ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সহায়তা পায়নি। মানবেতর জীবনযাপন করছে নিহতদের পরিবারগুলো। এ সময় বেশ কিছুদিন এই সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় চলতি সেচ মওসুমে বেশ ক’দিন পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু কৃষি জমি ও কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে সময়ের প্রয়োজনে সেচ কাজের পাম্পগুলোর পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ৫৩ হাজার হেক্টর (গ্রস), ২৮ লাখ ৫শ’ হেক্টর চাষযোগ্য এবং ২২ হাজার হেক্টর সেচযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন হয় ৩.৫৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদিত ফসলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধান এবং আলু। সেচ খাল হিসেবে ডাকাতিয়া নদীর ৫৮ কিলোমিটার ব্যবহার হচ্ছে এই প্রকল্পে।
জানা যায়, সেচ মৌসুমে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই চার মাস ৬টি পাম্পই চালু রাখতে হয়। কিন্তু মেশিনগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় গড়ে ১৫ ঘণ্টা পরিচালনা করা সম্ভব। তারপরও গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২০/২২ ঘন্টা করে পাম্প মেশিনগুলো চালাতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া রয়েছে এখানে জনবল সঙ্কট। মাত্র দুজন অপারেটর দিয়ে চলছে বড় ধরনের এই প্ল্যান্ট। ইতঃপূর্বে এ প্রকল্পের ৬টি পাম্পের বাস্তব অবস্থা দেখার জন্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শিক্ষকদের একটি টিম এসেছিলো। তারা পাম্পসহ বিভিন্ন মেশিনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করেন। এছাড়াও মেশিনগুলো পরিচালনা করা কিংবা মেরামত করা যায় কিনা এ বিষয়টি যাচাই করার জন্যে ভারতের তোসিমা পাম্প প্রাইভেট কোম্পানির সার্ভিস বিভাগের একজন প্রকৌশলী প্ল্যান্টে কাজ করেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, মূলত প্ল্যান্টে যে পাম্প মেশিনগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো ছিলো জাপানি ইবারা কর্পোরেশনের। এসব পাম্পের সাধারণত ২০-২৫ বছর কর্মক্ষমতা থাকে। কিন্তু এগুলোর বয়স এখন প্রায় চার যুগ। যে কারণে এসব মেশিন পরিবর্তন করে নতুন করে পাম্প মেশিন স্থাপন করার জন্যে ১১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এটি অনুমোদনও হয়। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় বর্তমান মেশিনগুলোই পরিচালনা করা সম্ভব এমন প্রশ্ন দেখা দিলে আবারও তা যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এই কাজটির দায়িত্ব দেয়া হয় বুয়েট এবং ভারতীয় তোসিমা পাম্প কোম্পানিকে। পরবর্তীতে আবারো ২০২৩ সালের ২৩ আক্টোবর ১৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হয়, যা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, পাম্পের মেশিনগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যয় বেড়েছে। এখন প্রতিমাসে প্রায় দুই কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। বর্তমানে স্লুইচ গেটের মেয়াদোত্তীর্ণ পাম্পগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমভাবে চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী দুই বছর পর এসব পাম্প চালানো হয়তো আর সম্ভব হবে না। চূড়ান্তভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে এসব পাম্প--এমনটি জানান এ কর্মকর্তা। তাই সর্বাগ্রে প্রকল্প এলাকার হাজার হাজার কৃষকের জন্য পাম্প মেশিনগুলো সম্পূর্ণরূপে সচল রাখা কিংবা পরিবর্তন অনিবার্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বাধিক পঠিত