• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

হুন্ডি মাফিয়া চক্রের ৯৬ অ্যাকাউন্টে ৬০০ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একটি হুন্ডি মাফিয়া চক্রের দুই শতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ নানা অপরাধের তথ্য পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই তথ্য জানিয়ে সিআইডি সূত্র বলছে, তারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সিআইডি বলছে, এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাঁরা দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালানসহ অবৈধভাবে দেশ থেকে অর্থপাচারে জড়িত। তাঁদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০৮ কোটি টাকার সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯৬ বলে সিআইডি জানিয়েছে।
সিআইডি বলছে, হুন্ডি চক্রের হোতা মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ৫৮২ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর সহযোগী গোলাম সারওয়ার আজাদ ও তরিকুল ইসলাম রিপন ফকিরের অ্যাকাউন্টে মিলেছে আরো ১০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য। তাঁদের গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। 
চক্রের সদস্যরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মার্কিন মুলুকেও সক্রিয়। এর মধ্যে তাঁরা ফাঁদে ফেলে এক মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে এই চক্রের সদস্যদের। এই চক্রের সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এঁরা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করে থাকেন।
সিআইডি সূত্র বলছে, সম্প্রতি এই অপরাধীরা ডেবোলা জন্সটোন রামলো ডেবি নামের একজন মার্কিন নাগরিককে কৌশলে তাঁদের ফাঁদে ফেলেন। তাঁর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকার বেশি (দুই কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫১.৭২ টাকা) আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি। মার্কিন শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এমন অভিযোগ পেয়ে তদন্তে সিআইডির সহযোগিতা চেয়েছে।
সিআইডির অনুসন্ধান অনুযায়ী, দেশে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে, সম্প্রতি এর চেয়ে বেশি পাচার করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এভাবে প্রতিবছর ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, হুন্ডি মানে অনেকের কাছে শুধু রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে না পাঠিয়ে অবৈধ কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে হুন্ডির ব্যাপকতা অনেক বেশি। তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের মাধ্যমে একজন মার্কিন নাগরিক প্রতারিত হন। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ পেয়ে এই নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে।
সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই হুন্ডি চক্র নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকদের সঙ্গে তারা একই ধরনের প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করে আসছে। অনুসন্ধানে উঠে আসা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে আইনক্স ফ্যাশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
মার্কিন নাগরিকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগটির অনুসন্ধানকালে আরো উঠে আসে, চক্রের সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। তাঁরা ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন দোকান থেকে ভাঙ্গারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে পাকা সোনার বার আকারে রূপান্তরিত করে দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছেন। এসব পাচার করা সোনার বার মূলত সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয় বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।
সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে রাখা টাকার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে কিছুটা কমে পাঁচ হাজার ৩৪৭ কোটি হয়। কিন্তু ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।