মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু
আবুল কালামের অকালমৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না স্বজনেরা

আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছিলেন আবুল কালাম। এরপর ভাই-বোনদের সংসারে বেড়ে ওঠেন। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। পরিবারের প্রিয় মানুষটি আজ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে এর আঘাতে মারা যান। তাঁর এমন অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজন ও গ্রামের মানুষেরা।
ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে আবুল কালাম ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। ২০ বছর আগে তাঁর বাবা ও মা মারা যান। এরপর তিনি বড় হন ভাই ও বোনদের কাছে।
সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান আবুল কালাম। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়েসন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। ওই কাজের জন্যই প্রতিদিন তিনি নারায়ণগঞ্জ–ঢাকা যাতায়াত করতেন।
প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম। এরপর গণমাধ্যমের সংবাদে পরিবারের সদস্যরা তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
আবুল কালামের মৃত্যুর খবরে শোকার্ত ঈশ্বরকাটি গ্রামের বাসিন্দারা। কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামে থাকা তাঁর স্বজনেরা। অনেকে ছুটে যান ঢাকায়।
আজ বিকেলে ঈশ্বরকাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়িতে চার ভাইয়ের টিনের চারটি বসতঘর রয়েছে। গ্রামে এলে একটি ঘরে থাকতেন আবুল কালাম। সেই ঘরটি তালাবদ্ধ। তাঁর বড় ভাই খোকন চোকদারের ঘরে বসে কাঁদছিলেন বড় বোন সেলিনা বেগম; কাঁদছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে গ্রামের মানুষেরা ও এলাকার তাঁর বন্ধুবান্ধব বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন।
ঘরে বসে আবুল কালামের ছবি হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড় বোন সেলিনা বেগম বলছিলেন, 'আমার ভাইটি সারা জীবন কষ্ট করেছে। কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছে। আজ দুই শিশুসন্তান রেখে সে নিজেও না ফেরার দেশে চলে গেছে। এখন এই শিশু দুটির কী অবস্থা হবে? কে তাদের পিতৃস্নেহ দেবে। তার বিধবা স্ত্রী কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে?"
আবুল কালামের বড় ভাই খোকন চোকদার গ্রামের বাড়িতে থাকেন। পারিবারিক জমিজমা দেখাশোনা করেন। পারিবারিক সেসব জমিজমা ও ফসলাদির খোঁজ নেওয়ার জন্য গত মাসে আবুল কালাম গ্রামের বাড়িতে আসেন। কাজ সেরে আবার ঢাকায় ফিরে যান। খোকন চোকদার বলেন, 'ওটাই যে আমার ভাইয়ের শেষযাত্রা হবে, আমি বুঝতে পারিনি। এখন সে ফিরবে প্রাণহীন দেহ নিয়ে। আমরা অপেক্ষায় আছি তার প্রাণহীন দেহটার জন্য। আমাদের পরিবারের সঙ্গে কেন এমন হলো। আমার ভাইটি তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন অকালে তাকে প্রাণ হারাতে হলো। তার স্ত্রী–সন্তানকেইবা এখন কে দেখবে?'

