• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস

আজকের নির্বাচনে বড় জয়ের মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ যে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি সে প্রমাণ মিলবে

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনের দুই দিন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনের মধ্যে নানা কারণে আলোচিত আসন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন। এছাড়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিক থেকেও নানা দিক বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। আর এ আসনেই একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় মনোনয়নে চমক দেখান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদ। এর আগে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান এমএ হান্নান। কিন্তু ঋণ খেলাপিজনিত কারণে ২৪ ডিসেম্বর তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান। তিনিসহ মোট ৯জন প্রার্থী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আজ রোববার ভোটের মাঠে থাকবেন। তবে নির্বাচনপূর্ব ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ বেশ সরব থাকলেও বিএনপি আদালতে নিজেদের প্রার্থী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ভোটের মাঠে নীরব ছিল।
    আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে  একটি পৌরসভা ও পনেরটি ইউনিয়নে একশত আঠারটি ভোট কেন্দ্র ও ছয়শত চৌদ্দটি ভোট কক্ষ রয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ নয় হাজার সাতশ’ ছিয়াত্তর জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ সাতান্ন হাজার আটশ’ আট জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা এক লাখ একান্ন হাজার নয়শ’ আটষট্টি জন। একশ’ আঠার জন প্রিজাইডিং অফিসার, ছয়শত চৌদ্দ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও বারশত পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন।
    বিগত কয়েকটি নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়ালী উল্যা নওজোয়ান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং রাজা মিয়া পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে ২৬৬, কুমিল্লা ২৬ (ফরিদগঞ্জ) থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ সফিউল্লাহ। তিনি জাসদ প্রার্থী খালেকুজ্জামানকে ৩৪,২৮০ ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মান্নান জাসদের প্রার্থী খালেকুজ্জামানকে ১৪,০২৮ ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মের নির্বাচনে জাপার প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাজা মিয়াকে ১৭,৮২৬ ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর হায়দার খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকারিয়া চৌধুরীকে ১০,৩৪৭ ভোটে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলমগীর হোসেন খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ শফিউল্লাহকে ১৮,৫২৮ ভোটে পরাজিত করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর হায়দার খান আওয়ামীলীগ প্রার্থী মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে ৩৬,৯৩৫ ভোটে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশিদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী শফিকুর রহমানকে ৭,০৬৯ ভোটে পরাজিত করেন। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন।
    নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ আসনকে নিজেদের দুর্গ হিসেবে চিহ্নিত করে বিএনপি। যদিও ফলাফল দিয়ে তা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রার্থী সাংবাদিক শফিকুর রহমান এবং এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। বর্তমান এমপির কথা এটি আওয়ামী লীগের খনি, যা এতদিন চাপা পড়ে ছিল। গত ৫ বছরে তিনি খনি উদ্ধারে সফল। নির্বাচনী ফলাফলে তার প্রমাণ মিলবে। অন্যদিকে বর্তমান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান জানান, মূলত এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বিগত নির্বাচনগুলোর মতো   ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি নির্বাচনেও তাকে কৌশলে হারানো হয়েছে। এবার তিনি এসব দিক নিয়ে সজাগ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে নিজেদের জয় নিশ্চিতে কেন্দ্র কমিটি গঠনসহ নির্বাচনী হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করেছে। তাদের বিশ্বাস, নির্বাচনে বড় জয়ের মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ যে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি এবার সে প্রমাণ মিলবে। তাছাড়া সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমানের বিষয়ে সর্ব সাধারণের মধ্যে একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
    এর সাথে বিগত ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন মামলা ও হামলা। প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কৌশলে ক্ষত-বিক্ষত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিপরীতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আ’লীগ বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী। ইতোমধ্যেই তাদের ওয়ার্ড পর্যায়ে মূল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে। ব্যাপক উন্নয়নের ফলে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাদের ভোট বেড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া গত ১০ বছরের নতুন প্রায় লক্ষাধিক ভোটার তাদের দিকে ঝুঁকবে বলে  আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বিশ্বাস।
    এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, ফরিদগঞ্জে ধানের শীষের কোনো প্রচার না থাকলেও আমাদের কর্মীরাই ৩০ তারিখে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জয় আনতে পারবে। শেষ মুহূর্তে হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ধানের শীষ পেয়ে বেশ উজ্জীবিত।
    এ আসনের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে অন্য প্রার্থীরা হলেন :  বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর এম আনিছুজ্জামান ভূঁইয়া (প্রতীক মই), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী গোলাম মাহমুদ ভূইয়া মানিক (প্রতীক মোমবাতি), এনপিপির প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাটওয়ারী (প্রতীক আম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুকবুল হোসাইন (প্রতীক হাতপাখা), জাকের পার্টির প্রার্থী বাচ্চু মিয়া ভাসানী (প্রতীক গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া (প্রতীক হারিকেন) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাইনুল ইসলাম (প্রতীক লাঙ্গল)।