• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আওয়ামী লীগে বাদ ঝুঁকিতে বড় নেতারা

প্রকাশ:  ২২ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আসন্ন জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দল ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে এ পরিবর্তন আনা হবে। এতে বাদ পড়তে পারেন অনেক বড় বড় নেতা। অন্যদিকে কর্মঠ, বুদ্ধিদীপ্ত তরুণরা স্থান পেতে পারেন নতুন কমিটিতে। এসবের জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তদারকি করতে ৮টি বিভাগীয় টিম গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বিভাগীয় টিমের প্রতিবেদন এবং সভাপতির নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নেতাদের তালিকা তৈরি হবে। বিশেষ করে সম্পাদকীয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, বিগত আড়াই বছরে দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি- এমন অনেক বড় নেতাই আছেন বাদ পড়ার ঝুঁকিতে। বছরের শুরুতে নতুন মন্ত্রিসভা, সংরক্ষিত মহিলা আসন এবং উপজেলা নির্বাচনে নতুনদের আধিক্যের পর এবার দলে বড় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা মনে করছেন।

২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কমিটিতে ৩০ ভাগই তরুণ নেতা। এবার এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। দল এবং সরকার যাতে সমান্তরাল গতিতে চলে সে জন্যও কেন্দ্র এবং তৃণমূলে অনেক বড় নেতা পদ হারাতে পারেন। অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় সম্মেলনেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে। তিনি বলেন, নতুনদের জায়গা দিতে পুরনোদের সরে যেতে হয়। তবে দলে কে কি অবদান রাখছেন, কমিটিতে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না তা নির্ভর করছে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যাদের যোগ্য মনে করবেন তাদের নিয়েই আগামীতে কমিটি গঠন করবেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ঢেলে সাজাতে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মুজিববর্ষ সামনে রেখেই দল ঢেলে সাজানোর কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। অক্টোবরে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটির মেয়াদেই (৩ বছর) উদযাপিত হবে মুজিববর্ষ।এ বর্ষ পালনের চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এদের স্থান দেয়া হতে পারে নতুন কমিটিতে। বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন তাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয় এ দায়িত্ব পালন করা। কাজেই আগেই তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুনদের নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করার সম্ভাবনা আছে।

জানা যায়, জাতীয় সম্মেলন ও মুজিববর্ষ উদযাপন ঘিরে কর্মঠ, বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একঝাঁক নতুন মুখ খুঁজছেন দলটির সভাপতি। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দেশের ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন তিনি। সেখান থেকে অনেকের নামের পাশেই সভাপতি টিক মার্ক দিয়ে রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখান থেকেই নতুন নেতা বেছে নেয়ার সম্ভাবনা আছে।বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় নতুনদের স্থান দেয়ায় কাজে গতি এসেছে। ইতিবাচক অনেক বিষয় এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মন্ত্রিসভায় তরুণদের সাফল্যের ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি চান দলের কর্মকাণ্ডেও। এজন্য দলেও তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার চিন্তা চলছে। তরুণদের জায়গা দিতে গেলে বাদ পড়বেন পুরনো নেতারা।এদিকে চলতি মাস থেকে আওয়ামী লীগের ৮টি কমিটির কর্মকাণ্ড শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু রমজান, ঈদসহ নানা দিক বিবেচনা নিয়ে জুনের মাঝামাঝি মাঠে নামবেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূল কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করে অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রত্যেকের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলের হাইকমান্ড।

এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের দলীয় তৎপরতা বাড়াতে উপদেষ্টা, প্রেসিডিয়াম ও কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্যদের নিয়ে ঘন ঘন বৈঠকও করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। চলতি মাসের ২ সপ্তাহে তিনটি বৈঠকে করেছেন তিনি। শুক্রবার দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর আগে ১২ এপ্রিল দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে সভা করেন তিনি। সেখানেও আগামী সম্মেলন ও দলে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৫ এপ্রিল কার্যনির্বাহী সংসদের সভা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলটির একাধিক নেতা জানান, হঠাৎ করে এত ঘন ঘন সভা বেশ কিছু ইঙ্গিত বহন করে।আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, দলের বেশ কয়েকজন নেতা বিগত আড়াই বছরে নিজ দফতরে একটি বৈঠকও করতে পারেননি। অনেকে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কেও সঠিকভাবে অবহিত নন। দিবসভিত্তিক ও রুটিন কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে ছিলেন না- তারা এবার কমিটিতে স্থান পাবেন না। এছাড়া দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী কোনো নেতা এবার জাতীয় ও তৃণমূল কমিটিতে স্থান পাবেন না। নতুন করে বিতর্ক ওঠা নেতারাও থাকবেন শেখ হাসিনার আগামী কমিটির বাইরে। সে হিসেবে বর্তমান কমিটির অনেকেই বাদ পড়ার তালিকায় আছেন। যুগান্তর

সর্বাধিক পঠিত