• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দক্ষিণাঞ্চলে নেতাকর্মীদের ঈদ: ফেসবুক ও মেসেজে শুভেচ্ছা দেখা মেলেনি নেতাদের

প্রকাশ:  ০৮ জুন ২০১৯, ১২:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এবারের ঈদে দলীয় হেভিওয়েট নেতাদের দেখা পাননি। বিএনপির অধিকাংশ নেতা এলাকায় যাননি। শুধু ফেসবুক আর মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে কেউ কেউ ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।বিএনপির অধিকাংশ নেতা এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে ঈদ করেছেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে আছেন এমন কয়েকজন ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের নেতাও ঈদে তাদের ক্ষমতার শিকড় ভোটারদের কাছে যাননি।৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ২১ জন শুধু নয়, মনোনয়নের জন্য লবিং-তদবির চালানো বিএনপির কয়েকশ’ নেতার মধ্যে প্রায় কেউই ঈদের সময় এলাকায় ছিলেন না।

এলাকায় আসা তো দূরের কথা, ঈদে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ফোন পর্যন্ত ধরেননি অনেকে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যদের অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন। তবে অনুপস্থিত ছিলেন দলটির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। তাদের মধ্যে অবশ্য ২-৪ জন এমন আছেন যারা কখনোই কোনো ঈদেই এলাকায় থাকেন না।সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর এলাকা ছাড়া বিএনপির অধিকাংশ সংসদ সদস্য প্রার্থী ৬ মাসে একবারও এলাকায় আসেননি। একই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনও নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন না তারা। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া জহিরুদ্দিন স্বপন শুধু ঈদেই নয়, ৬ মাসেও একবার আসেননি এলাকায়। একইভাবে এলাকায় ছিলেন না দলটির প্রার্থী আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রতি বছর ঈদে এলাকায় থাকলেও এবার ছিলেন বিদেশে।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সরফুদ্দিন সরদার সান্টু এবং শহিদুল হক জামাল ৬ মাস ধরে এলাকায় অনুপস্থিত। ঈদেও ছিলেন না তারা। এলাকায় ছিলেন আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য শাহে আলম এবং রুবীনা মীরা। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের মানুষ এবার এমপি, এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা মনোনয়ন প্রার্থী কাউকেই ঈদে কাছে পাননি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন এবং বিএনপির প্রভাবশালী নেত্রী বেগম সেলিমা রহমান ছিলেন না এলাকায়। ছিলেন না বাবুগঞ্জের সন্তান ওয়ার্কার্স পার্টির কর্ণধার সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

ঈদের দিন এলাকায় ছিলেন শুধু সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের পঙ্কজ দেবনাথ ঈদে ছিলেন এলাকায়। ছিলেন না বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং সাবেক এমপি মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদ।এলাকায় ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুুল্লাহ এবং সাবেক এমপি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার। ছিলেন না সদ্য সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না আমিন এলাকায় থাকলেও ছিলেন না বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচন করা সাবেক এমপি আবুল হোসেন।

বরাবরের মতো এবারও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছাড়াই ঈদের দিনটি কাটিয়েছে ঝালকাঠী জেলার দুটি নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষ। এ দুটি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু এবং ঝালকাঠী-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের বিএইচ হারুন বলতে গেলে প্রায় কখনোই ঈদের দিন থাকেন না নির্বাচনী এলাকায়। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে রাজধানীর নানা আয়োজনে আমির হোসেন আমুর উপস্থিত থাকা জরুরি হলেও বিএইচ হারুন কেন ঈদে এলাকায় থাকেন না সেটা একটা বড় প্রশ্ন সাধারণ মানুষের কাছে।এছাড়া ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা শাহজাহান ওমর ও জেবা খান এবং এ দুই আসনে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে থাকা বিএনপির সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো, মাহবুবুল আলম নান্নু, মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম জামাল ও আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান মনির ঈদে আসেননি এলাকায়। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির রুস্তম আলি ফরাজী ঈদে ছিলেন এলাকায়। মঠবাড়িয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা পিরোজপুরের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ এবং পৌর মেয়র রাফিউদ্দিন ফেরদৌস। তবে এলাকায় ছিলেন না বিএনপি নেতা রুহুল আমিন দুলাল।

পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠী) আসনের এমপি ও পূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম ঈদে এলাকায় ছিলেন। ছিলেন না ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা জামায়াত নেতা মাসুদ সাঈদী। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি ফখরুল ইসলামও আসেননি এলাকায়। এলাকায় ছিলেন না সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল। ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শেখ এ্যানি রহমান। বরাবরের মতো এবারও ঈদে এলাকায় ছিলেন না পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী) আসনের এমপি জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। একই সঙ্গে এলাকায় ছিলেন না এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর।পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী-দুমকি-মির্জাগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিঞা ঈদে ছিলেন এলাকায়। ছিলেন না বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। অবশ্য তিনি কখনোই ঈদের সময় এলাকায় থাকেন না। বছর-দু’বছরে একবারও তার মুখ দেখেন না এলাকার মানুষ।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ঈদে একমাত্র এলাকায় ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল। এলাকায় ছিলেন না এখানকার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম ফিরোজ, বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার এবং তার স্ত্রী সালমা আলম লিলি।এছাড়া এখানকার আরেক বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারও ঈদে আসেননি। পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এমএম শাহজাদা সাজু ঈদে নির্বাচনী এলাকায় থাকলেও ছিলেন না বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি। আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক এমপি আ খ ম জাহাঙ্গীরও ঈদে আসেননি এলাকায়।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের এমপি মহিবাবুর রহমান মুহিব ছিলেন এলাকায়। ছিলেন না একই দলের সদ্য সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং বিএনপির মনোনয়নে ভোট যুদ্ধে নামা দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন। একেবারে আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় থাকলেও আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য ঈদের দিন লন্ডনে ছিলেন ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। এলাকায় ছিলেন না এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম। অবশ্য তিনি প্রায় কোনো ঈদেই থাকেন না এলাকায়।নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন ভোলা-১ (ভোলা সদর) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহম্মেদ, ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের এমপি আলী আজম মুকুল এবং ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তবে এলাকায় ছিলেন না এসব আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মেজর (অব.) হাফিজ ও হাফিজ ইব্রাহিম। অবশ্য তাদের মধ্যে হাফিজ বলতে গেলে প্রায় কখনোই আসেন না এলাকায়।এছাড়া বরগুনার দুটি আসনের দু’জন এমপির মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এলাকায় থাকলেও বরাবরের মতো এবারও ছিলেন না বরগুনা-২-এর শওকত হাচানুর রহমান রিমন। এ দুই আসনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা নেতাদের কেউই ছিলেন না এলাকায়।যুগান্তর

সর্বাধিক পঠিত