• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

রোহিঙ্গার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে

প্রকাশ:  ২৩ জুলাই ২০১৮, ২২:২৭
উজ্জ্বল হোসাইন
প্রিন্ট

মিয়ানমারের রাখাইনে নির্মম-নিষ্ঠুর নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের মুখে প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু এত বিপূলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। বছরের পর বছর বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা আমাদের জন্য কঠিন। বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বর্তমানে আর্থিক চাপসহ নানা ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে সরকারকে। খুব সহসা এ সংকটের সমাধান না হলে আরো চাপে পড়বে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করেছে। এ সমস্যার সমাধানও মিয়ানমার সরকারকে করতে হবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও একই কথা বলেছেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে তাদের দুঃখ-দর্দশার কথা জানতে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের জীবন বিপন্ন করে মিয়ানমার যা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই বাংলাদেশি নয়, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সরকারকে বিবেচনা করা উচিত। তাদের অস্বীকার করার সুযোগ নেই মিয়ানমারের। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারের ওপর চায় প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো তৎপর হতে হবে।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেথতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তিনি। সোমবার কক্সবাজারে আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান শুধু বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়, এ বিষয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আমাদের গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। তারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সহায়তা দিয়ে যেতে আমরা প্রস্তুত আছি। জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। আমরা সবাই আজ রোহিঙ্গা। তাদের জন্য কাজ শেষ হয়ে যায়নি। এই সংকট সমাধানে অবশ্যই সব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার নিশ্চিয়তা দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।

এর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ঢাকায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠককালে রোহিঙ্গা সংকটকে মানবিক ট্র্যাজেডি বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ বর্বরতার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’ রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশকে ৪৮ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার কথাও জানিয়েছেন জিম ইয়ং কিম।  

জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের এসব বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। বিশ্বব্যাংক বা অন্যদের আর্থিক সহায়তায় হয়তো রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের একটি সংস্থান হবে। কিন্তু যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। গুতেরেস ও কিম উভয়েই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমরাও মনে করি, এ সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শক্তিশালী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে গড়িমসি করছে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমার সরকার যেন প্রত্যাবাসন নীতিমালা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয় এবং সেখানে তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে, সেজন্য বিশ্বব্যাংকসহ সব দাতাগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা যাতে করে তাদের জন্ম ভূমিতে ফিরে গিয়ে নিরাপদভাবে বাস করতে পারে সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। ফিরে যাবার পর যদি তারা ফের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে আবারও তারা বাংলাদেশে চলে আসবে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এই সংকট মিয়ানমার তৈরি করেছে, তাই সমাধানও তাদের করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এব্যাপারে এগিয়ে আসবে।